More

    জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়ের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা

    দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এক অধ্যায়ের সূচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস-এর কাছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের সুদূরপ্রসারী সুপারিশমালা পেশ করেছে। এই পদক্ষেপ দেশের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা, গণতন্ত্রের সুসংহতকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    সুপারিশ পেশ ও উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ

    মঙ্গলবার দুপুরে এক অনাড়ম্বর অথচ গুরত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে, ঐকমত্য কমিশন-এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ অত্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশমালা অধ্যাপক ইউনূস-এর কাছে হস্তান্তর করেন। উল্লেখ্য, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই এই গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য কমিশন-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা কমিশনের কাজের প্রতি তাঁর গভীর অঙ্গীকারের ইঙ্গিত বহন করে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্য প্রবীণ সদস্যবৃন্দ। এছাড়াও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন-এর সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া প্রমুখ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার-ও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তাদের সম্মিলিত উপস্থিতি এই সুপারিশমালার জাতীয় গুরুত্ব এবং সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতাকে আরও দৃঢ় করেছে।

    সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপট ও ঐকমত্যের গুরুত্ব

    দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার পুনরাবৃত্তি রোধ করে দেশে একটি টেকসই ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। এই মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য, সরকার সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার মতো রাষ্ট্রের ছয়টি স্তম্ভে সুদূরপ্রাযী সংস্কার আনার জন্য পৃথক ছয়টি বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠন করেছিল। এই কমিশনগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল সুশাসন, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশদ সুপারিশমালা তৈরি করা।

    বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্য ও জনসমর্থন সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই পরবর্তীতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ ও জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, ঐকমত্য কমিশন দেশের ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ও জোট-এর সঙ্গে নিবিড় ও ফলপ্রসূ আলোচনা পরিচালনা করে। এই আলোচনা প্রক্রিয়ার ফসল হিসেবে সংবিধানসহ অন্যান্য মৌলিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনাসমূহ সমন্বিত করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রণীত হয়েছে। ৮৪টি সুনির্দিষ্ট ও যুগোপযোগী প্রস্তাবনা সম্বলিত এই ঐতিহাসিক দলিলে ইতিমধ্যেই ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট স্বাক্ষর করে সংস্কার বাস্তবায়নে তাদের অটল অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এটি শুধু একটি সুপারিশমালা নয়, বরং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে একটি শক্তিশালী সম্মিলিত প্রতিজ্ঞা, যা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সনদ কার্যকর হলে দেশের শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here