More

    বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কী হয়েছে

    সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পরাজয়ের পর স্বভাবতই দলের পারফরম্যান্স নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতেই সংবাদ সম্মেলনে আসেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান। তাঁকে উদ্দেশ্য করে ছুড়ে দেওয়া হয় এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন: দলের এই ব্যাটিং ব্যর্থতা, বিশেষত মিডল অর্ডারের ধারাবাহিক ধস কেন?

    প্রশ্নটির উত্তরে তানজিমের মুচকি হাসি আর ‘উত্তরটা আমার কাছে নেই’ মন্তব্যটি কেবল তাঁর অসহায়ত্বই প্রকাশ করেনি, বরং দলের গভীরে প্রোথিত এক সমস্যার দিকেই যেন ইঙ্গিত করেছে। একদিকে যেখানে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে শেষ ওভারে ৩ ছক্কাসহ ২২ রান খরচ করে সমালোচিত হয়েছেন, ঠিক অন্যদিকে ব্যাট হাতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণও দিয়েছেন। যদিও তাঁর এই ব্যাটিং ক্ষমতা এখনও পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠেনি, গতকালের প্রেক্ষাপটে এটি ছিল মূলত দলের টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মারাত্মক ব্যর্থতার ফল। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন পরিস্থিতি, যেখানে দলের মূল ব্যাটিং স্তম্ভরা ব্যর্থ হচ্ছেন এবং একজন বোলারকে ব্যাট হাতে ইনিংস টেনে তুলতে হচ্ছে, তা মোটেও নতুন কোনো চিত্র নয়। এটি যেন বারবার ফিরে আসা এক পুরনো চিত্রনাট্য।

    বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সাফল্যের আড়ালে এক দুর্বল চিত্র

    চলতি বছর বাংলাদেশ টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাদের সেরা সময় পার করছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়েছে তারা, যা অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হওয়ার আগে টানা চারটি টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের মতো ঈর্ষণীয় সাফল্যও অর্জন করেছে টাইগাররা। এমন ধারাবাহিক সাফল্যের মাঝেও দলের একটি নির্দিষ্ট অংশ – মিডল অর্ডার ব্যাটিং – তাদের দুর্বলতা প্রকটভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। এ বছর খেলা ২৫টি টি–টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের গড় স্ট্রাইক রেট দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১৯.৮৩। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে এটি সর্বনিম্ন, যা দলের সামগ্রিক সাফল্যের আড়ালে এক মারাত্মক দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরে।

    মধ্যম সারির ব্যাটিং: পরিসংখ্যানের নির্মোহ বিশ্লেষণ

    মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে বড় ইনিংসের অভাব এই মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য এক বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ দল মধ্যম সারির ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে মাত্র দুটি ফিফটি পেরোনো ইনিংস পেয়েছে। এর মধ্যে জাকের আলী ২৩ ম্যাচ খেলে একটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন, আর তাওহিদ হৃদয় ১৯ ম্যাচ খেলে করেছেন আরেকটি ফিফটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই ধরনের সীমিত অবদান দলের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা সহজে অনুমেয়। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে এ বছর মিডল অর্ডার থেকে ফিফটি পাওয়ার তালিকায় বাংলাদেশের নিচে শুধু শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এই তুলনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শ্রীলঙ্কা এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের অর্ধেকেরও কম ম্যাচ খেলেছে। এটি বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের সমস্যাকে আরও বেশি গুরুতর করে তোলে, যেখানে প্রচুর সুযোগ পেয়েও ব্যাটসম্যানরা আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারেননি।

    দলের মিডল অর্ডারের এই দুরবস্থার কারণ কী, সেই প্রশ্নের উত্তর একজন পেস বোলার তানজিমের পক্ষে দেওয়াটা স্বাভাবিকভাবেই কঠিন। তাঁর ভাষায়, “এটা আসলে ব্যাটসম্যানরা ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবে। সত্যি বলতে এই উত্তরটা আসলে আমার কাছে নেই।” তানজিমের এই মন্তব্য কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অক্ষমতা নয়, বরং দলের মূল ব্যাটসম্যানদের দিকেই দায়ভার ঠেলে দিয়েছে। এটি পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত করে যে, গতকালের ম্যাচেও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, যা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অনস্বীকার্য ব্যর্থতা দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যদি না দ্রুত এর সমাধান করা হয়।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here