মিরপুরের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছিল, ঠিক তখনই চট্টগ্রামের টি-টোয়েন্টি সিরিজে শুরুতেই হোঁচট খেয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল সিরিজ বাঁচানোর লড়াই। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৯ রানে আটকে রেখে একটি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দিতে সক্ষম হয় তারা, যা সিরিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস: শুরুতেই ঝড়, পরে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ
বুধবার চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুতেই অবশ্য ক্যারিবীয়রা ধাক্কা খায়; দলীয় মাত্র ১ রানেই ওপেনার ব্রেন্ডন কিং তাসকিন আহমেদের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। তবে এই প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে উইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপ এবং আরেক ওপেনার আলিক অ্যাথেঞ্জ মিলে রীতিমতো তাণ্ডব শুরু করেন।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এই দুই ব্যাটসম্যান ৫৯ বলে ১০৫ রানের এক বিধ্বংসী পার্টনারশিপ গড়েন। তাদের আগ্রাসী ব্যাটিং এতটাই অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছিল যে, একপর্যায়ে মনে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনায়াসেই ২০০ রানের গণ্ডি ছাড়িয়ে যাবে। শাই হোপ তার অধিনায়কোচিত ইনিংসে ৩৬ বলে ৩টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৫৫ রান সংগ্রহ করেন। অন্যদিকে, আলিক অ্যাথেঞ্জ তার ঝলমলে ব্যাটিংয়ে ৩৩ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন।
টাইগার বোলারদের দারুণ প্রত্যাবর্তন
কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা দমে যাননি। একাদশ ওভারের পর থেকেই ম্যাচের লাগাম টেনে ধরতে শুরু করেন তারা। বিশেষ করে, ১২তম ওভারের পর থেকে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। ১১.২ ওভারে দলীয় ১০৬ রানে নাসুম আহমেদের বলে আউট হয়ে আলিক অ্যাথেঞ্জ যখন বিদায় নেন, তখন বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তির সুবাতাস বয়। এর পরপরই চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা শেরেফান রাদারফোর্ডকে কোনো রান করার সুযোগ না দিয়ে নাসুম আহমেদ সরাসরি বোল্ড করে দেন। নাসুমের এই জোড়া আঘাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের গতিতে বড়সড় ছেদ পড়ে।
এরপর মোস্তাফিজুর রহমানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত শাই হোপকেও থামতে হয়। তার উইকেট পতনের পর উইন্ডিজের রানের চাকা অনেকটাই মন্থর হয়ে যায়। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে।
বাংলাদেশের বোলিংয়ের ঝলক
বাংলাদেশ দলের পক্ষে বোলাররা সমন্বিত পারফরম্যান্স দেখান। দলের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান তার ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান খরচ করে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেন। তরুণ স্পিনার রিশাদ হোসেন তার ২০ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট তুলে নেন, যা দলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়। এছাড়া, নাসুম আহমেদ ৩৫ রান দিয়ে ২ উইকেট লাভ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপে বড়সড় ফাটল ধরান। তাদের এই সম্মিলিত বোলিং প্রচেষ্টাই প্রতিপক্ষকে সম্মানজনক স্কোরের নিচে আটকে রাখতে সাহায্য করে।
লক্ষ্য এবং সিরিজের সমীকরণ
সিরিজের এই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয়ের জন্য বাংলাদেশ দলকে ১২০ বলে ১৫০ রান করতে হবে। এই রান তাড়া করতে ব্যর্থ হলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ জয় নিশ্চিত করবে, যা বাংলাদেশের জন্য হবে এক বড় ধাক্কা। তাই টাইগারদের সামনে এখন শুধু রান তাড়া নয়, বরং নিজেদের ঘরের মাঠে সিরিজ বাঁচানোর এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।
