চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের মধ্যকার তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জমে উঠেছে উত্তেজনা। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জয়লাভ করে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ক্যারিবীয়রা এই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। অন্যদিকে, ওয়ানডে সিরিজ হারের পর টি-টোয়েন্টিতে ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল, তবে শুরুতেই তাদের এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে টাইগার বোলাররা।
শুরুর ধাক্কা ও হোপ-অ্যাথেঞ্জের প্রতিরোধ
ব্যাট হাতে মাঠে নেমেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ওপেনার ব্রেন্ডন কিং মাত্র ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। দলীয় স্কোরে ১ রান যোগ হতেই প্রথম উইকেট হারানো ক্যারিবীয় শিবিরে তখন স্পষ্টতই দুশ্চিন্তার ছায়া। তবে, এই প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে দলের হাল ধরেন অভিজ্ঞ অধিনায়ক শাই হোপ এবং আরেক ওপেনার আলিক অ্যাথেঞ্জ। উইকেটে থিতু হয়ে তারা রীতিমতো ব্যাটিং তাণ্ডব শুরু করেন।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এই দুই ব্যাটসম্যান উইন্ডিজের ইনিংসকে এক ভিন্ন মাত্রা দেন। তারা মাত্র ৫৯ বলে চোখ ধাঁধানো ১০৫ রানের এক বিশাল পার্টনারশিপ গড়েন, যা দলের স্কোরবোর্ডে দ্রুত রান যোগ করে। তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বোলাররা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। আলিক অ্যাথেঞ্জ ছিলেন বিশেষভাবে বিধ্বংসী, তিনি ৩৩ বলে ৫টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৫২ রানের একটি চমৎকার ইনিংস খেলেন, যা তার ব্যাটিং দক্ষতার পরিচয় দেয়। অধিনায়ক শাই হোপও তার যোগ্য সঙ্গ দেন, তিনিও দ্রুত গতিতে রান তোলেন এবং দলের স্কোর বড় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
নাসুম আহমেদের জোড়া আঘাত: খেলার মোড় ঘোরানো মুহূর্ত
যখন অ্যাথেঞ্জ ও হোপের জুটি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল এবং বাংলাদেশের বোলারদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তখনই ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হন স্পিনার নাসুম আহমেদ। ম্যাচের ১২তম ওভারে তিনি এক অসাধারণ বোলিং প্রদর্শনী উপহার দেন। এই ওভারের দ্বিতীয় বলেই তিনি বিধ্বংসী আলিক অ্যাথেঞ্জকে সাজঘরে ফেরান, যিনি নাসুমের শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৫২ রানে থামেন। এটি ছিল উইন্ডিজের জন্য একটি বড় ধাক্কা, কারণ অ্যাথেঞ্জ তখন দুর্বার গতিতে রান তুলছিলেন।
তবে নাসুমের জাদু এখানেই শেষ হয়নি। অ্যাথেঞ্জকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরের বলেই তিনি চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা শেরেফান রাদারফোর্ডকে সরাসরি বোল্ড করে দেন। রাদারফোর্ড কোনো রান না করেই, অর্থাৎ ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। পরপর দুই বলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করে নাসুম আহমেদ রীতিমতো ক্যারিবীয় ব্যাটিং অর্ডারে কাঁপন ধরিয়ে দেন এবং তাদের রানের গতিতে লাগাম টেনে ধরেন। তার এই ব্যাক টু ব্যাক উইকেট শিকার শুধু উইকেট সংখ্যাই বাড়ায়নি, বরং খেলার মোড় সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দেয় এবং বাংলাদেশকে ম্যাচে দারুণভাবে ফিরিয়ে আনে।
শাই হোপের বিদায় ও ক্যারিবীয় ইনিংসের চতুর্থ পতন
নাসুম আহমেদের জোড়া আঘাতে উইন্ডিজের রানের গতি কিছুটা কমে এলেও, এক প্রান্তে ব্যাট হাতে অবিচল ছিলেন অধিনায়ক শাই হোপ। তিনি একটি অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেন এবং দলকে আরও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে, ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ পেসার মোস্তাফিজুর রহমান তাকে আউট করে উইন্ডিজ শিবিরে আরও একটি বড় আঘাত হানেন। শাই হোপ ৩৬ বলে তিনটি চার এবং তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৫৫ রান করে আউট হন। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের চতুর্থ উইকেট হারায়, যা তাদের বড় স্কোরের স্বপ্নকে আরও কঠিন করে তোলে।
উল্লেখ্য, ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরে গেলেও, টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৬৫ রান করে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ১৬ রানে পরাজিত করে। আজকের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি তাদের জন্য সিরিজ নিশ্চিত করার সুবর্ণ সুযোগ। অন্যদিকে, বাংলাদেশের জন্য এটি সিরিজে টিকে থাকার লড়াই। এমন পরিস্থিতিতে, নাসুম আহমেদের মতো বোলারদের পারফরম্যান্স দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
