দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর একরাশ আক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করা সত্ত্বেও, সাবিনা খাতুন, আফঈদা খন্দকার, ঋতুপর্ণা মেন্ডেস-এর মতো উজ্জ্বল তারকাদের হৃদয়ে সব সময়ই একটি শূন্যতা কাজ করত – আর তা হলো একটি সুসংগঠিত ঘরোয়া ফুটবল লিগের অভাব। দেশের এই শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের পেশাদার ক্যারিয়ারের বিকাশে এটি একটি বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যেখানে তাদের মেধা ও অনুশীলন প্রদর্শনের জন্য নিয়মিত একটি প্ল্যাটফর্মের অভাব ছিল প্রকট।
ঘরোয়া লিগের স্বপ্নপূরণ: বাফুফের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
তবে এবার সেই অপেক্ষার প্রহর ফুরাতে চলেছে, যা দেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) মেয়েদের ফুটবলের বিকাশে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসেই শুরু হতে যাচ্ছে বহু কাঙ্ক্ষিত মেয়েদের ফুটবল লিগ। প্রাথমিকভাবে ছয়টি দল নিয়ে এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে, যা নারী ফুটবলারদের জন্য পেশাদারিত্বের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার, এই আনন্দময় সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন বাফুফের সহসভাপতি ও মার্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান ফাহাদ করিম। তিনি বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, “সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে, আমরা আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে ছয়টি দল নিয়ে মেয়েদের লিগ শুরু করার কথা ভাবছি। আমাদের লক্ষ্য হলো, পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই লিগের সকল খেলা সফলভাবে সম্পন্ন করা, যাতে খেলোয়াড় এবং সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য একটি সুচারু পরিকল্পনা বজায় থাকে।”
এই উদ্যোগ দেশের নারী ফুটবলারদের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। এটি কেবল শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের জন্য একটি নিয়মিত এবং সুসংগঠিত প্ল্যাটফর্মই তৈরি করবে না, বরং তৃণমূল পর্যায় থেকে নতুন প্রতিভা অন্বেষণ ও তাদের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ঘরোয়া লিগের মাধ্যমে খেলোয়াড়রা নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন, যা তাদের শারীরিক সক্ষমতা, কৌশলগত জ্ঞান এবং সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল আরও শক্তিশালী পারফরম্যান্স প্রদর্শনে সক্ষম হবে। এটি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারী ফুটবলের সামগ্রিক মান উন্নত করবে এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক মেয়েকে ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের ক্রীড়া সংস্কৃতিতে এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
