ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে বিধ্বংসী রূপে আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ এখন অনেকটাই শক্তি হারিয়েছে, কিন্তু এর রেশ এখনও কাটেনি। দুর্বল হয়ে পড়া সত্ত্বেও, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়ার পর থেকেই এর গতিবিধি এবং তীব্রতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, এবং এটি বর্তমানে নিম্নচাপ রূপে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের উপর অবস্থান করছে। উত্তর দিকে এর অগ্রসরের সাথে সাথে এর প্রভাব আরও বিস্তৃত হচ্ছে, যা আশেপাশের অঞ্চলের আবহাওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’র দুর্বল হয়ে ওঠা ও বর্তমান অবস্থান
একদা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলে ভীতির সঞ্চার করা ‘মোন্থা’ এখন তার প্রলয়ংকরী শক্তি হারিয়ে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার রাতে এটি একটি নিম্নচাপ আকারে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের উপর অবস্থান করছিল। যদিও এর ভয়াবহতা কমে এসেছে, এর সঞ্চিত জলীয়বাষ্প এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপ এখনও অঞ্চলের আবহাওয়ার উপর প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে এটি আরও উত্তর দিকে ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, যার ফলে এর প্রভাব বলয় একটি বৃহৎ অঞ্চলে বিস্তৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে মোন্থা’র প্রভাব
দুর্বল হয়ে পড়া সত্ত্বেও, ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’র প্রভাব বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে সুস্পষ্ট। গতকাল এর সরাসরি প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অংশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা তাপমাত্রায় কিছুটা স্বস্তি এনেছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজও রাজধানীসহ দেশের তিনটি ভিন্ন বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব বেশি তীব্র হবে না, বরং বিচ্ছিন্নভাবে হালকা বৃষ্টি হিসেবেই এটি পরিলক্ষিত হবে। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই ধরনের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত আরও অন্তত দুই দিন ধরে চলতে পারে, যা আবহাওয়াকে কিছুটা অস্থির রাখবে।
রাজধানীর আবহাওয়ার পরিবর্তন
আজ সকালে রাজধানী ঢাকার আবহাওয়া ছিল রোদে ঝলমলে এবং মনোরম। নীল আকাশে সূর্যের উজ্জ্বল উপস্থিতি দিনটিকে একটি সতেজ শুরু দিয়েছিল। তবে সকাল সাড়ে নয়টার দিক থেকে আকাশ দ্রুত মেঘে ঢাকা পড়তে শুরু করে, যা আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে যখন এই প্রতিবেদন লেখা হচ্ছিল, তখনও আকাশ ছিল যথেষ্ট মেঘাচ্ছন্ন, যা দিনের বেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনার জানান দিচ্ছিল। এই আকস্মিক পরিবর্তন মোন্থা’র দূরবর্তী প্রভাবেই ঘটছে বলে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনশীলতা নিয়ে প্রথম আলোর সাথে কথা বলেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, আজ রাজধানীতে বৃষ্টির জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে এবং ইতিমধ্যেই রাজধানীর আশপাশের কিছু এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। তার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগেও বৃষ্টি হতে পারে। তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন যে, এই বৃষ্টিপাত সরাসরি ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’র প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণেই ঘটছে, যা এখনো আঞ্চলিক আবহাওয়াকে প্রভাবিত করছে।
বৃষ্টিপাতের কারণ: দ্বিমুখী নিম্নচাপের প্রভাব
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র আরও জানিয়েছে যে, বর্তমানে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তার পেছনে কেবল ‘মোন্থা’র প্রভাবই একমাত্র কারণ নয়। একই সময়ে আরব সাগরেও একটি নতুন নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা যোগাচ্ছে এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করছে। এই দুটি নিম্নচাপের সম্মিলিত প্রভাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। এই দ্বিমুখী চাপ আবহাওয়ায় এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে, যার ফলস্বরূপ এই সময়ে বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আগামী দিনের পূর্বাভাস ও তাপমাত্রা পরিবর্তন
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন যে, আগামী শুক্রবার ও শনিবারও দেশের বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, রবিবার থেকে এই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে এবং আবহাওয়া স্বাভাবিকের দিকে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সময়ের বৃষ্টিপাতের পর দেশের তাপমাত্রা খানিকটা কমে আসতে পারে বলেও এই আবহাওয়াবিদ পূর্বাভাস দিয়েছেন। তাপমাত্রার এই হ্রাস জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ার এই সময়ে। সামগ্রিকভাবে, ‘মোন্থা’র দুর্বল হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এর রেখে যাওয়া প্রভাব আরও দু’একদিন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় অনুভূত হবে, যা বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি এবং তাপমাত্রা হ্রাসের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাবে।
