More

    ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন সহজভাবে প্রকাশের আহ্বান

    জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বহুল প্রতীক্ষিত আট খণ্ডের প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য এর একটি সহজবোধ্য সংস্করণ প্রকাশের জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এই আহ্বান শুধু তথ্য উন্মুক্তকরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি সুদূরপ্রসারী শিক্ষামূলক উদ্যোগের ইঙ্গিত বহন করে, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ধারণাকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সহায়ক হবে।

    প্রতিবেদন হস্তান্তর ও মূল বিষয়বস্তু

    গতকাল, বুধবার সন্ধ্যায়, রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই বিস্তারিত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। আট খণ্ডে বিভক্ত এই সুবিশাল দলিলে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা, অনুষ্ঠিত সভাগুলোর কার্যবিবরণী, এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ সুসংবদ্ধভাবে লিপিবদ্ধ আছে। এটি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান: সহজবোধ্যতা ও শিক্ষায় গুরুত্ব

    প্রতিবেদন গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলে নিহিত তথ্যগুলোকে সাধারণের বোধগম্য ভাষায় উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ জোর দেন। তিনি বলেন, “এই প্রতিবেদনকে একটি সরলীকৃত সংস্করণে প্রস্তুত করতে হবে এবং বই আকারে প্রকাশ করা উচিত। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যেন এটি সহজে পড়ে বুঝতে পারে এবং এর মর্মার্থ অনুধাবন করে অন্যদেরও বোঝাতে সক্ষম হয়।” এর মধ্য দিয়ে তিনি জ্ঞান বিতরণ এবং নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

    অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন যে, বইটি কেবল বাংলা ভাষাতেই নয়, বরং ইংরেজি ভাষাতেও প্রকাশ করা আবশ্যক, যাতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পরিমণ্ডলেই এর বার্তা পৌঁছায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করেন, “ভবিষ্যতে বইটি যেন শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য হয়ে ওঠে, সেই বিষয়টিও আমাদের গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে। তরুণ প্রজন্ম এই বইটি পড়বে, দেশের মৌলিক নীতি ও ঐকমত্যের দর্শন সম্পর্কে নিজেরা অবগত হবে এবং অর্জিত জ্ঞান তাদের মা-বাবাসহ সমাজের অন্যান্য স্তরের মানুষের কাছেও পৌঁছে দেবে, যা একটি শিক্ষিত ও সচেতন জাতি গঠনে সহায়ক হবে।” এটি একটি সামগ্রিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সচেতনতা বৃদ্ধির এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, যা দীর্ঘমেয়াদে সমাজের ভিত্তি মজবুত করবে।

    উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ

    প্রতিবেদন হস্তান্তরকালে ঐকমত্য কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যবৃন্দ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তাঁদের উপস্থিতি এই আয়োজনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

    কমিশনের সহসভাপতির বক্তব্য: প্রতিবেদনের বিস্তারিত

    এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আট খণ্ডের এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। তিনি জানান, এই সুবিশাল দলিলে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’, কমিশনের কার্যক্রমের বিস্তারিত প্রক্রিয়া, এর প্রেক্ষাপট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে প্রাপ্ত লিখিত প্রস্তাবনা, সাধারণ মানুষের গভীর মতামত, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রেরিত বিস্তারিত স্প্রেডশিট এবং সব ধরনের আলোচনা ও সংলাপ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। অধ্যাপক রীয়াজ আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “আমাদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে এই আট খণ্ডের প্রতিবেদন দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী ও গবেষণামূলক ক্ষেত্রে এক অপরিহার্য রেফারেন্স হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা নীতি প্রণয়ন ও ভবিষ্যতের পথনির্দেশনায় সহায়ক হবে।”

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here