বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলা এবং তাদের সুপ্ত উদ্ভাবনী প্রতিভাকে বিকাশের সুযোগ করে দিতে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্ব। এই উৎসব কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি জ্ঞান, আবিষ্কার ও প্রযুক্তির এক অনন্য মিলনমেলা, যা তরুণ শিক্ষার্থীদের মনে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
জাতীয় পর্বের শুভ সূচনা ও আকর্ষণীয় উদ্বোধন
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র আসাদ গেটে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল প্রাঙ্গণে এক উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার সকালে এই মহাযজ্ঞের শুভ সূচনা ঘটে। দিনব্যাপী এই আয়োজনে শিক্ষার্থীরা তাদের বৈজ্ঞানিক মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পাবে। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে ভবিষ্যতের প্রযুক্তির এক ঝলক উপস্থাপন করে অত্যাধুনিক রোবট ‘নাও’, যা অংশগ্রহণকারী ও দর্শকদের প্রতি শুভেচ্ছা বার্তা জানায় এবং তাদের মনে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের সুরে পতাকা উত্তোলন এবং বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে আয়োজনের সূচনা করা হয়। এই গৌরবময় মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন দেশের শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক এবং প্রযুক্তি খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ। সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও জেমস পেরেরা, বিকাশ লিমিটেডের ইভিপি অ্যান্ড হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট হুমায়ূন কবির, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, এবং বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম — এঁরা সবাই তাঁদের মূল্যবান বক্তব্যে তরুণ শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং তাদের ভবিষ্যৎ উদ্ভাবক ও গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেন।
প্রতিযোগিতার ক্যাটাগরি ও অংশগ্রহণকারী
সারা দেশ থেকে আসা ৭০টিরও বেশি স্কুলের আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। তারা দুটি প্রধান ক্যাটাগরিতে তাদের সুপ্ত প্রতিভার স্বাক্ষর রাখার সুযোগ পাচ্ছে: প্রজেক্ট প্রদর্শনী এবং বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতা।
-
প্রজেক্ট প্রদর্শনী: এই ক্যাটাগরিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থী একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তাদের উদ্ভাবনী বৈজ্ঞানিক মডেল এবং ধারণা উপস্থাপন করছে। তাদের প্রকল্পগুলো দৈনন্দিন জীবনের সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করছে, যা তাদের গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনার পরিচায়ক।
-
বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতা: শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এই কুইজ প্রতিযোগিতা দুটি ভিন্ন স্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
- নিম্নমাধ্যমিক ক্যাটাগরি: ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখানে তাদের মেধার পরিচয় দিচ্ছে।
- মাধ্যমিক ক্যাটাগরি: নবম থেকে দশম শ্রেণি এবং ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এই ক্যাটাগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এই প্রতিযোগিতা কেবল তথ্য যাচাই নয়, বরং বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলোর গভীরতা অনুধাবনের এক চমৎকার সুযোগ।
আকর্ষণীয় পুরস্কার ও দিনব্যাপী বিশেষ আয়োজন
এই জাতীয় পর্বের বিজয়ীদের জন্য থাকছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক পুরস্কারের সম্ভার। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ বই, ব্যবহারিক বিজ্ঞান বাক্স, দৃষ্টিনন্দন ট্রফি, সম্মানসূচক মেডেল এবং প্রশংসাপত্রসহ আরও অনেক কিছু। এই পুরস্কারগুলো শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক যাত্রায় তাদের উৎসাহিত করবে এবং ভবিষ্যতের গবেষণা ও আবিষ্কারে তাদের আরও আগ্রহী করে তুলবে।
দিনব্যাপী এই উৎসবে শুধু প্রতিযোগিতা নয়, থাকছে শিক্ষামূলক এবং আনন্দদায়ক আরও অনেক আয়োজন, যা বিজ্ঞানকে আরও সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলছে। দর্শনার্থী ও অংশগ্রহণকারীরা রোবট শো-এর মাধ্যমে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সায়েন্স আনপ্লাগড (বিজ্ঞান বক্তৃতা) পর্বে দেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরা সহজ ও সাবলীল ভাষায় জটিল বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলো ব্যাখ্যা করছেন, যা তরুণদের মনে বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করছে। এছাড়া রয়েছে বিজ্ঞান ম্যাজিক-এর মতো চিত্তাকর্ষক পরিবেশনা, যেখানে বিজ্ঞানের সূত্রগুলো জাদুর মোড়কে উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রশ্ন-উত্তর পর্ব, মনোমুগ্ধকর গান এবং তারকাকথন এই উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে, যা বিজ্ঞানকে কেবল পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জীবনঘনিষ্ঠ ও মজাদার করে তুলছে।
তথ্যের জন্য যোগাযোগ
এই বিজ্ঞান উৎসব দেশের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানের পথে আগ্রহী করে তোলার এক মহৎ উদ্যোগ। এবারের জাতীয় পর্বের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা ও উদ্ভাবনী শক্তির উন্মোচন হবে, যা ভবিষ্যতে জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উৎসবের সর্বশেষ খবর, ফলাফল এবং বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন এ, বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসব ও বিজ্ঞানচিন্তার ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে। এছাড়াও, বিস্তারিত তথ্য পাবেন প্রথম আলো এবং বিজ্ঞানচিন্তার প্রিন্ট সংস্করণে।
