ফুটবল কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কেবল মাঠের সাফল্যের চূড়ায় আরোহণ কিংবা একের পর এক রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন দেখেন না, বরং তাঁর হৃদয়ে এক সুপ্ত ও বিরল আকাঙ্ক্ষা বাসা বেঁধে আছে—নিজের ছেলের সঙ্গে একই জার্সি গায়ে, একই মাঠে খেলার। সম্প্রতি সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, যখন তাঁর পুত্র ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুনিয়র পর্তুগালের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে অভিষেক করেছেন। এই ঘটনা ফুটবল মহলে ব্যাপক কৌতূহল ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে।
পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৬ দলে রোনালদো জুনিয়রের ঐতিহাসিক অভিষেক
গতকাল রাতে পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে প্রথমবার মাঠে নেমে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুনিয়র এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। তুরস্কের আনাতোলিয়ায় অনুষ্ঠিত ফেডারেশনস কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে পর্তুগাল ২-০ গোলে স্বাগতিক তুরস্ককে পরাজিত করে। এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ১৫ বছর বয়সী তরুণ উইঙ্গার রোনালদো জুনিয়র বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার সুযোগ পান। খেলার যোগ করা সময়ে তাঁর সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা ফুটবল বিশ্বে দারুণভাবে নজর কেড়েছে। ম্যাচে পর্তুগালের হয়ে গোল দুটি করেন স্পোর্টিং লিসবনের স্যামুয়েল তাভারেস এবং এসসি ব্রাগার রাফায়েল কাবরাল, যা দলের জয় নিশ্চিত করে।
জুনিয়রের ফুটবল যাত্রা ও ভবিষ্যতের পূর্বাভাস
বর্তমানে রোনালদো জুনিয়র সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরের একাডেমিতে খেলছেন, যেখানে তাঁর বাবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো একজন তারকা খেলোয়াড়। এটি তাঁর ফুটবলীয় বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পর্তুগালের বয়সভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে জুনিয়রের এটিই প্রথম অভিজ্ঞতা নয়। এর আগে তিনি পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যেখানে চারটি ম্যাচে অংশ নিয়ে গোল করার সক্ষমতা দেখিয়েছেন। দ্রুত গতিতে তাঁর এই অগ্রগতি ফুটবল ভক্তদের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে—তিনি কি বাবার মতোই দ্রুত জাতীয় দলে প্রবেশ করে সেই স্বপ্নের মুহূর্তটি বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন?
তুরস্কে আয়োজিত এই ফেডারেশনস কাপ টুর্নামেন্টে পর্তুগালের অনূর্ধ্ব-১৬ দল মোট তিনটি ম্যাচ খেলবে। তুরস্কের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জয়ের পর, আগামীকাল শনিবার ওয়েলসের মুখোমুখি হবে তারা। এরপর সোমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে তাদের টুর্নামেন্ট শেষ হবে। এই ম্যাচগুলো রোনালদো জুনিয়রের জন্য তার প্রতিভা প্রদর্শনের আরও সুযোগ এনে দেবে।
পিতার স্বপ্ন ও পুত্রের পদচারণা: এক অনন্য উত্তরাধিকার
৪০ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সিনিয়র এখনো তাঁর ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী সময় পার করছেন। সম্প্রতি তিনি তাঁর ফুটবল জীবনের ৯৫০তম গোলের এক অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই সর্বকালের সেরা ফুটবলার ২০২৬ সালের বিশ্বকাপেও খেলার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন। একই সাথে, তিনি নিজের ছেলের সাথে মাঠে নামার স্বপ্নও লালন করেন। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে রোনালদো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি আমার ১৪ বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে খেলতে চাই। দেখা যাক কী হয়। এটা আমার চেয়ে তার ওপর বেশি নির্ভর করছে।”
পিতার এই আকাঙ্ক্ষা এবং পুত্রের দ্রুত গতিতে বয়সভিত্তিক ফুটবলে এগিয়ে আসা, ফুটবলপ্রেমীদের মনে এক বিশেষ প্রত্যাশা তৈরি করেছে। ফুটবল বিশ্ব এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য, যখন বাবা ও ছেলে একসঙ্গে পর্তুগালের জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামবেন এবং ফুটবল ইতিহাসের পাতায় এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করবেন। রোনালদো জুনিয়রের এই অভিষেক সেই স্বপ্ন পূরণের দিকে এক দৃঢ় পদক্ষেপ।
