More

    সেমিফাইনালে উঠেই শিরোপায় চোখ জারিফের

    বাংলাদেশের টেনিস অঙ্গনে নতুন আশার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন তরুণ সেনসেশন জারিফ আবরার। ৩৫তম বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড টেনিস ট্যুর জুনিয়র জে-৩০ প্রতিযোগিতায় তার অসাধারণ পারফরম্যান্স দর্শকদের মুগ্ধ করছে। জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে জারিফ ইতোমধ্যেই সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছেন, যা তাকে চ্যাম্পিয়নশিপের আরও এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে গেছে।

    কোয়ার্টার ফাইনালে রোমাঞ্চকর জয়

    আজ কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে ভারতের শৌনক চ্যাটার্জির বিপক্ষে এক দুর্দান্ত ও শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলেন জারিফ। প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার দীর্ঘ এই ম্যাচটি ছিল যেন এক নাটকীয়তার প্রতিচ্ছবি। শেষ পর্যন্ত ২-১ সেটে শৌনককে পরাজিত করে বিজয়ের হাসি হেসেছেন এই বাংলাদেশী তরুণ। টেনিস কোর্টে তার এই অসাধারণ দৃঢ়তা ও লড়াইয়ের মানসিকতা তাকে আলাদা করে চিনিয়ে দিয়েছে।

    ম্যাচের শুরুটা অবশ্য জারিফের জন্য অনুকূলে ছিল না। প্রথম সেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরও ৫-৭ গেমে পিছিয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু এই হার তাকে দমাতে পারেনি। দ্বিতীয় সেটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেন জারিফ এবং ৬-২ গেমে সেটটি জিতে সমতা ফেরান। এর ফলে ম্যাচের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়, যেখানে কে জিতবে তা বলা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

    তৃতীয় সেটটি ছিল ম্যাচের মূল আকর্ষণ, যেখানে দর্শক ও খেলোয়াড় উভয়েই চরম নাটকীয়তার সাক্ষী হয়েছেন। শুরুতে জারিফ ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে সহজ জয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল, ম্যাচ প্রায় তার হাতের মুঠোয়। কিন্তু টেনিস কোর্টের অনিশ্চয়তা আবারও প্রমাণিত হলো, যখন অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শৌনক ৫-৩ গেমে লিড নিয়ে নেন। এমন অবস্থায় অনেকেই জারিফের হার নিশ্চিত ভেবেছিলেন। তবে জারিফ আবরার হার মানতে রাজি ছিলেন না। পিছিয়ে পড়েও তিনি তার আত্মবিশ্বাস হারাননি এবং পরপর চারটি গেম জিতে ৭-৫ ব্যবধানে সেটটি নিজের করে নেন। এটি ছিল এক অসাধারণ প্রত্যাবর্তন, যা তাকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে জয় ছিনিয়ে আনার ক্ষমতা প্রমাণ করে।

    এমন একটি কঠিন লড়াই জেতার পর জারিফ নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, “ভাগ্যটা সহায় ছিল। আসলে এই ম্যাচ জিতব ভাবিনি। একটা সময় আমি ৩-৫ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ি। এতটা ব্যবধানের পর ঘুরে দাঁড়াতে পারব চিন্তাও করিনি। তবে একটা সময় মোমেন্টটা শিফট হয়েছে।” তার এই বিনয় এবং বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন তার মানসিক পরিপক্কতার পরিচয় দেয়।

    শিরোপার লক্ষ্যে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ

    সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেই জারিফের চোখ এখন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ পুরস্কার, অর্থাৎ শিরোপার দিকে। ম্যাচের পর তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “ইনশাআল্লাহ, সেমিফাইনালে একটা ভালো ম্যাচ খেলব। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারব, সেই আত্মবিশ্বাসটাও আছে।” আগামীকাল শেষ চারে তার প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ডের আরিয়াফোল লেকুল। এই সেমিফাইনাল ম্যাচটি জারিফের জন্য আরেকটি কঠিন পরীক্ষা হতে চলেছে, যেখানে তার লক্ষ্য থাকবে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে পৌঁছানো।

    গত ১১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১১টি দেশ অংশ নিচ্ছে, যা টুর্নামেন্টকে দিয়েছে এক আন্তর্জাতিক মাত্রা। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো—অস্ট্রেলিয়া, চীন, চাইনিজ তাইপে, যুক্তরাজ্য, হংকং, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র। এই টুর্নামেন্টে জারিফ আবরারের মতো তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বাংলাদেশের টেনিসের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here