গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক মর্মান্তিক ঘটনায় চোর সন্দেহে তিন ব্যক্তিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত গভীর রাতে, আনুমানিক আড়াইটার দিকে, উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। এই গণপিটুনির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে তাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হবে।
গণপিটুনির বিস্তারিত ঘটনা
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী মাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম-এর বাড়িতে। গতকাল শনিবার রাত আড়াইটার দিকে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর বাড়ির গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। বাড়ির লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা দ্রুত ছুটে আসেন। গরু চুরির খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজিত জনতা লাঠিসোঁটা হাতে চোরদের ধাওয়া করে। জনতার তাড়া খেয়ে চোরেরা পার্শ্ববর্তী নাসিরাবাদ গ্রামের দিকে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে।
পালিয়ে যাওয়ার সময় নাসিরাবাদ গ্রামের লোকজন তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আবারও ধাওয়া করে। জীবন বাঁচাতে সেই তিন ব্যক্তি স্থানীয় একটি পুকুরে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু ক্ষুব্ধ জনতা তাদের পুকুর থেকে টেনে তুলে ব্যাপক মারধর শুরু করে। এই বর্বর গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। অপর একজন গুরুতর আহত হন, যার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।
পুলিশের উদ্ধার অভিযান ও তৃতীয় ব্যক্তির মৃত্যু
খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশ গুরুতর আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তবে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁরও মৃত্যু হয়, যা ঘটনাটিকে আরও মর্মান্তিক করে তোলে। এইভাবে, চোর সন্দেহে মোট তিনজনের প্রাণহানি ঘটে।
পুলিশের বক্তব্য ও চলমান তদন্ত
আজ রবিবার সকালে তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম। মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, নিহতদের লাশ উদ্ধারের জন্য পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। ওসি আরও বলেন, “তাঁদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত না করে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এই ধরনের গণপিটুনির ঘটনা সমাজের বিচারহীনতা ও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
