ঝিনাইদহে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে সরকারি কৃষি প্রণোদনার সার ও বীজ উদ্ধারের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে যখন বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রকাশিত সংবাদটির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ কর্তৃক কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য জামায়াতকে প্রদানকৃত সার ও বীজ বিতরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় সাময়িকভাবে দলীয় কার্যালয়ে সেগুলো মজুত রাখা হয়েছিল। এই অপ্রত্যাশিত মজুতকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং জামায়াতের প্রতিবাদ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
জামায়াতের প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা
বিতর্কিত এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পরই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। শনিবার এক বিশেষ বিবৃতির মাধ্যমে দলটি ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং প্রকাশিত সংবাদটিকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যমূলক ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করে।
বিবৃতিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান প্রকাশিত সংবাদটির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, এটি কেবল ভিত্তিহীনই নয়, বরং সুচিন্তিতভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁর ভাষ্যমতে, এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর ভাবমূর্তি বিনষ্টের এক হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য জামায়াতকে যে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর সম্পূর্ণ বিতরণ সম্ভব না হওয়ায় অবশিষ্ট অংশ সাময়িকভাবে দলীয় কার্যালয়ে রাখা হয়েছিল। এই মজুত কোনো অবৈধ উদ্দেশ্যে নয়, বরং বিতরণের সুবিধার্থে ছিল বলে তিনি দাবি করেন।
সার ও বীজ উদ্ধারের বিস্তারিত ঘটনা
গত শুক্রবার গভীর রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সুরাট বাজার এলাকার ইউনিয়ন জামায়াতের কার্যালয় থেকে সরকারি প্রণোদনার এসব সার ও বীজ উদ্ধার করে কৃষি বিভাগ। আকস্মিক এই অভিযানে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মধ্যরাতে প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কৃষি কর্মকর্তারা তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু সরকারি কৃষি উপকরণ জব্দ করেন।
উদ্ধারকৃত উপকরণের মধ্যে ছিল: ৮ প্যাকেট শর্ষেবীজ, ৫ বস্তা ডিএপি সার, ৫ বস্তা পটাশ সার, ৮ কেজি শর্ষে এবং ১৯ কেজি মসুরবীজ। এসব উপকরণ কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ছিল, যা একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে পাওয়া যাওয়া নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কৃষি কর্মকর্তাদের বক্তব্য
প্রত্যক্ষদর্শী মঞ্জুরুল ইসলাম জোয়ারদার জানান, শুক্রবার রাতে জামায়াতের সাইনবোর্ডযুক্ত অফিসে সরকারি সার ও বীজের মজুত দেখে স্থানীয় জনমনে ব্যাপক কৌতূহল ও ভিড় তৈরি হয়। বিষয়টি দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হতে শুরু করে।
এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. জুনায়েদ হাবীব এবং সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরা ইউনিয়ন জামায়াত কার্যালয়ে সার ও বীজের মজুত স্বচক্ষে দেখতে পান এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই করে সেগুলো উদ্ধার করে ঝিনাইদহ জেলা সদরে নিয়ে যান। তাঁদের এই দ্রুত পদক্ষেপ সরকারি কৃষি প্রণোদনা বিতরণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নূর এ নবী এই প্রসঙ্গে সুস্পষ্টভাবে জানান যে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত সার বা বীজ কোনো রাজনৈতিক কার্যালয়ে মজুত রাখা সরকারি নীতিমালা ও আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তিনি আরও যোগ করেন যে, কৃষকেরা গত বুধবার উপজেলা পরিষদ থেকে এই প্রণোদনার সার ও বীজ গ্রহণ করেছিলেন। বিতরণকালে প্রতিটি কৃষকের কাছ থেকে যথাযথ স্বাক্ষরও নেওয়া হয়েছিল। এই নির্দিষ্ট সার ও বীজগুলো মোট ১২ জন কৃষককে দেওয়ার জন্য বরাদ্দকৃত ছিল, যা পরবর্তীতে একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে পাওয়া যায়। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন যে, এমন গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উপকরণ একটি রাজনৈতিক কার্যালয়ে কীভাবে এলো এবং এর পেছনের উদ্দেশ্য কী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরূপ ঘটনার কারণে সরকারি কৃষি প্রণোদনা বিতরণের স্বচ্ছতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যার তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।
