বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে, ঠিক তখনই বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে একটি সম্ভাব্য সমঝোতার খবর রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের সুপারিশের পর থেকে গণভোটের সময়সীমা নিয়ে দল দুটির মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ ও পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা যায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের নেতারা পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
বিএনপি-জামায়াতের সমঝোতার গুঞ্জন
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আজ শনিবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি প্রকাশ করেন। তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনে ন্যাশনাল ওলামা অ্যালায়েন্স আয়োজিত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে তরুণ আলেমদের ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের’ কথা শোনান।
পাটওয়ারী জানান, তাদের কাছে এমন একটি ‘অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়ার খবর’ এসেছে যেখানে বিএনপি হয়তো তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থেকে সরে আসবে, এবং জামায়াতও নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি প্রত্যাহার করতে পারে। এই ধরনের একটি সমঝোতা হলে তা দেশের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
জুলাই সনদ ও এনসিপির অবস্থান
জুলাই সনদে এখনও স্বাক্ষর না করা দল হিসেবে এনসিপি’র নেতা পাটওয়ারী দৃঢ়ভাবে বলেন, বড় দুটি দলের ভোটের দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে জুলাই সনদকে তারা দেখতে চান না। তিনি মনে করেন, যদি সনদটিকে নিছক রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলে এর প্রকৃত উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব হবে না। এনসিপি এই সনদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বাস্তবায়নে আগ্রহী, যা কোনো দলের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ না হয়ে একটি আদর্শিক ভিত্তি পাবে।
গণভোটের খরচ নিয়ে ভিন্নমত
গণভোট আয়োজনে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে – বিএনপি’র পক্ষ থেকে উত্থাপিত এমন যুক্তিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর বিএনপির কোনো কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ বা অবৈধ উপায়ে অর্থ সংগ্রহের যে অভিযোগ উঠেছে, সেই অর্থ দিয়েই তো বাংলাদেশে একটি গণভোটের আয়োজন করা সম্ভব।’ তার এই মন্তব্য বিএনপি’র আর্থিক স্বচ্ছতা এবং গণভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
বিএনপি’র দ্বৈত রাজনৈতিক কৌশল
এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই সারোয়ার তুষার নামের অপর এক বক্তা বিএনপি’র রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘বিএনপি একদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কার্ড খেলছে, আবার অন্যদিকে ধর্মের কার্ডও খেলছে’ – যা দলটির আদর্শিক অবস্থান এবং রাজনৈতিক সততা নিয়ে জনমনে সংশয় তৈরি করছে। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান এবং কথিত সমঝোতার খবর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা আগামী দিনের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
