More

    প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানদের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা

    দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঐতিহাসিক নির্বাচন যেন সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়, সে লক্ষ্যে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানকে সুনির্দিষ্ট ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে এই নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম, এবং এর সার্বিক নিরাপত্তায় কোনো প্রকার আপস না করার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন সরকার প্রধান।

    শনিবার এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন যে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য এই বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং জনসম্পৃক্ত উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন নির্ভয়ে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

    শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। জাতীয় নিরাপত্তার কৌশলগত দিকগুলো পর্যালোচনা এবং আসন্ন নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য এই বৈঠকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও উপস্থিত থেকে আলোচনাকে আরও সমৃদ্ধ করেন। বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং কর্তৃক প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়, যা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখার সরকারের অঙ্গীকারেরই প্রতিচ্ছবি।

    সামরিক বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতি ও নতুন নির্দেশনা

    বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের জাতীয় নিরাপত্তা সুসংহত রাখা এবং গত ১৫ মাস ধরে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অসাধারণ পেশাদারিত্ব ও নিবেদিত প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সকল বাহিনীর সদস্যরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অপরিহার্য ভূমিকা রেখেছে। এই কঠিন পরিশ্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একই সাথে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যেন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, এবং সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়াটি একটি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়, সেই লক্ষ্যে তিন বাহিনীর প্রধানদেরকে তিনি কঠোর ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। এই নির্দেশনাগুলো নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের প্রতিটি প্রান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা প্রস্তুতি ও সেনা মোতায়েন

    প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধান তাঁদের নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তাঁরা আশ্বস্ত করেন যে, নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, নির্বাচনকালীন সময়ে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষায় এক বিশাল সংখ্যক সামরিক সদস্য মোতায়েন করা হবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৯০ হাজার সেনাসদস্য, আড়াই হাজার নৌবাহিনীর সদস্য এবং দেড় হাজার বিমানবাহিনীর সদস্য দেশব্যাপী বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে দায়িত্ব পালন করবেন। নিরাপত্তার এই ব্যাপক পরিকল্পনা কার্যকর করতে দেশের প্রতিটি উপজেলায় অন্তত এক কোম্পানি সেনা মোতায়েন করা হবে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সুরক্ষার জাল বিস্তার করবে। এই সুসংগঠিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্ন ও ত্রুটিমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here