ফুটবল বিশ্বে, বিশেষত রিয়াল মাদ্রিদের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের ডাগআউটে নতুন কোচের যাত্রা সবসময়ই এক বিশেষ আলোচনার জন্ম দেয়। এবার সেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন জাবি আলোনসো, যিনি প্রথমবারের মতো রিয়াল মাদ্রিদের প্রধান কোচের আসনে বসেছেন। তার সাফল্য কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা সময় বলবে, তবে ৪৩ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ কিংবদন্তির শুরুটা এতটাই উজ্জ্বল যে তা বিগত ছয় দশকের রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। সম্প্রতি লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের এক দাপুটে জয়ে তাদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে।
অসাধারণ সাফল্যের পরিসংখ্যান
চলতি মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এটি ছিল ১৪ ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের ১৩তম বিজয়। এই অভূতপূর্ব পারফরম্যান্সের মাধ্যমে জাবি আলোনসো রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায় সূচনা করেছেন। লিগে ১১ ম্যাচের মধ্যে ১০টিতেই জয় পেয়েছে তারা, এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৩ ম্যাচের তিনটিতেই পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে, যা তাদের অদম্য মনোভাবের পরিচায়ক।
এই অসাধারণ সাফল্যের ধারায় একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে লিগের ম্যাচটি, যেখানে গত সেপ্টেম্বরে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ৫-২ গোলের বড় ব্যবধানে হেরেছিল তারা। কিন্তু সেই পরাজয় দলের সামগ্রিক ছন্দপতন ঘটাতে পারেনি, বরং তা যেন নতুন করে দলকে উজ্জীবিত করেছে এক দৃঢ় প্রত্যাবর্তনের পথে। এই প্রথম ১৪ ম্যাচে এমন দুর্দান্ত শুরু রিয়াল মাদ্রিদ সর্বশেষ পেয়েছিল দীর্ঘ ৬ দশকেরও বেশি সময় আগে, ১৯৬১-৬২ মৌসুমে কিংবদন্তি স্প্যানিশ কোচ মিগুয়েল মুনোজের অধীনে।
ইতিহাসের পাতায় এক ব্যতিক্রমী সূচনা
জাবি আলোনসোর অধীনে রিয়ালের এই শুরু কেবল বর্তমান সাফল্যের ইঙ্গিত দেয় না, বরং তা ক্লাবের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসেও এক বিশেষ স্থান দখল করে। গত ৬২ বছরের দীর্ঘ সময়ে রিয়াল মাদ্রিদের ডাগআউটে অনেক কিংবদন্তি কোচ এলেও, তাঁদের কেউই প্রথম ১৪ ম্যাচে এমন একপেশে সাফল্যের নজির স্থাপন করতে পারেননি। এই পরিসংখ্যানই আলোনসোর কোচিংয়ের গভীর প্রভাব এবং দলের আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্সের ইঙ্গিত দেয়।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, রিয়াল মাদ্রিদ এর চেয়ে ভালো শুরু পেয়েছিল কেবল একবার, সুদূর ১৯২৮-২৯ মৌসুমে। সেবার হোসে অ্যাঞ্জেল বেরাওন্দোর অধীনে দলটি মৌসুমের প্রথম ১৪ ম্যাচের মধ্যে ১৩টিতে জয় লাভ করেছিল এবং একটিতে ড্র করেছিল, যা বর্তমান সাফল্যকে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। জাবি আলোনসো যেন সেই ঐতিহাসিক সাফল্যকেই নতুন করে জাগিয়ে তুলেছেন, যা তাকে ক্লাবের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
কিলিয়ান এমবাপ্পে: সাফল্যের মূল কারিগর
রিয়াল মাদ্রিদের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার মূল কারিগরদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফরাসি সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপ্পে। তার গোল করার ক্ষমতা এবং মাঠে তার গতি ও ড্রিবলিং প্রতিপক্ষের জন্য সবসময়ই এক বড় হুমকি। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে দাপুটে জয়েও এমবাপ্পে নিজের জাত চিনিয়েছেন জোড়া গোল করে। ম্যাচের নবম মিনিটে পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল আদায়ের পর ৩১তম মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান তিনি, যা দলের জয়ের পথ সুগম করে।
দলটির হয়ে বাকি দুটি গোল করেন উদীয়মান ইংলিশ তারকা জুড বেলিংহাম ৪৪তম মিনিটে এবং স্প্যানিশ ডিফেন্ডার আলভারো কারেরাস ৮২তম মিনিটে, যা দলের আক্রমণের গভীরতা এবং বৈচিত্র্য প্রমাণ করে।
এমবাপ্পের গোলসংখ্যা: কিংবদন্তিদের বেঞ্চমার্ক
চলতি মৌসুমে লা লিগায় কিলিয়ান এমবাপ্পের গোল সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩-তে, পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার নামের পাশে যুক্ত হয়েছে আরও ৫টি গোল। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে তার প্রথম ৪৫ ম্যাচে মোট ৪৪টি গোল করে তিনি কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো তারকাদের বেঞ্চমার্ক স্পর্শ করেছেন, যা ক্লাবের ইতিহাসে এক বিরল কীর্তি। এমবাপ্পের এই পারফরম্যান্স কেবল তার ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেরই প্রমাণ নয়, বরং রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যতের জন্য এক উজ্জ্বল প্রতিশ্রুতিরও ইঙ্গিত দেয়।
