More

    মার্কিন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত করল চীন

    সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ফলপ্রসূ আলোচনার প্রেক্ষাপটে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপ বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে একটি আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অঙ্গনে স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে।

    বুধবার বেইজিং থেকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তারা নির্দিষ্ট কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর পূর্ব-নির্ধারিত ২৪% অতিরিক্ত শুল্ক আগামী এক বছরের জন্য স্থগিত করবে। তবে, এই স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও ১০% শুল্ক এখনো বহাল থাকবে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, বাণিজ্য সম্পর্কের উত্তেজনা পুরোপুরি নিরসন হয়নি, বরং এটি একটি সতর্ক পদক্ষেপ যা দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ প্রশস্ত করতে পারে।

    স্টেট কাউন্সিলের ট্যারিফ কমিশন এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে একটি স্থিতিশীল কাঠামোর মধ্যে ফিরিয়ে আনা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সমর্থন যোগানোর কথা উল্লেখ করেছে। উল্লেখ্য, দীর্ঘ বছর ধরে চলমান শুল্ক যুদ্ধ এবং পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পর উভয় দেশই বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে পুনরায় সহযোগিতা ও আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করার ফলেই এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেওয়া সম্ভব হয়েছে। এটি কেবল একটি শুল্ক স্থগিতাদেশ নয়, বরং অর্থনৈতিক কূটনীতির একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত যা বৈশ্বিক বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

    কৃষি পণ্যের শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা: দ্বিমুখী সুফল

    এর পাশাপাশি, চীন আগামী ১০ নভেম্বর থেকে মার্কিন কৃষি পণ্যের ওপর আরোপিত নির্দিষ্ট শুল্ক ১৫% পর্যন্ত প্রত্যাহার করার একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা এই পদক্ষেপকে উভয় দেশের জন্য লাভজনক হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, এর ফলে সয়াবিন, ভুট্টা, এবং বিভিন্ন ধরণের মাংসের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন কৃষি পণ্যের চীনে আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এটি একদিকে যেমন মার্কিন কৃষকদের জন্য নতুন বাজার উন্মুক্ত করবে এবং তাদের আয় বৃদ্ধি করবে, তেমনি অন্যদিকে চীনের ভোক্তারাও স্থিতিশীল ও সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য পাবেন, বিশেষ করে যখন খাদ্যের ক্রমবর্ধমান দাম তাদের জন্য একটি বড় উদ্বেগ। এই উদ্যোগ উভয় দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থকে রক্ষা করার একটি প্রগতিশীল প্রচেষ্টা।

    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সিদ্ধান্তের মূলে রয়েছে গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ-পর্যায়ের কৌশলগত বৈঠক। সেই বৈঠকে দুই রাষ্ট্রপ্রধান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। যদিও এই বৈঠকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বৃহৎ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি, তবুও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এই সংলাপকে বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উত্তেজনা হ্রাস করার একটি নতুন এবং ইতিবাচক প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই আলোচনা ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

    সূত্র: সামা টিভি

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here