More

    যুক্তরাষ্ট্রে বিমান বিধ্বস্তে নিহত বেড়ে ৭, আরও হতাহতের শঙ্কা

    যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি রাজ্যে এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে জনজীবন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লুইসভিল মুহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেওয়ার পরপরই একটি ইউপিএস এমডি-১১ কার্গো বিমান বিধ্বংসী বিস্ফোরণে মাটিতে আছড়ে পড়ে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বিমানটির তিনজন ক্রু সদস্যসহ অন্তত সাতজনের প্রাণহানি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। এছাড়াও, আরও এগারো জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

    মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বিবরণ

    দেশের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইউপিএস ফ্লাইট ২৯৭৬ নামের এই এমডি-১১ কার্গো বিমানটি স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে হোনোলুলুর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানের একটি ডানায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়, যা অল্প সময়ের মধ্যেই এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে এবং স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আকাশে আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়ার পর পরই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুত নিচের দিকে ধাবিত হয় এবং সজোরে মাটিতে আছড়ে পড়ে। মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরও একটি ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে, যা পুরো এলাকাকে প্রকম্পিত করে তোলে।

    ভূমি এবং আশপাশের এলাকায় ভয়াবহতা

    বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ার পর পরই আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত আশপাশের শিল্প ভবনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। ঘন কালো ধোঁয়ায় মুহূর্তেই আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে যায়, যা দূর থেকেও দুর্ঘটনার ভয়াবহতা জানান দিচ্ছিল। কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, দুর্ঘটনাস্থলে ভূমিতে থাকা অন্তত একজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও এগারো জন দগ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

    কর্মকর্তাদের শোক ও তৎপরতা

    লুইসভিল মুহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা, জোনাথন বেভিন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘আহতদের অনেকেই গুরুতর অসুস্থ এবং তাদের জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।’ কেনটাকি রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ডি বেসিয়ার বলেছেন, কর্তৃপক্ষ নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গকে এই মর্মান্তিক খবর জানাতে নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি আরও জানান যে, এই মুহূর্তে তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা।

    লুইসভিলের মেয়র ক্রেইগ গ্রিনবার্গ নিশ্চিত করেছেন যে, দুর্ঘটনার পরপরই সমস্ত জরুরি পরিষেবা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং উদ্ধারকাজ ও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থলে আগুন জ্বললেও, তা দ্রুততম সময়ে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।

    তদন্ত এবং পরবর্তী পদক্ষেপ

    এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার পেছনের মূল কারণ উদঘাটনে মার্কিন জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (এনটিএসবি) তদন্তের নেতৃত্ব দেবে। এতে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) সব রকম সহায়তা প্রদান করবে। প্রাথমিক তদন্তে উড্ডয়নের অব্যবহিত পরেই বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতকে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও পরিস্থিতি জানতে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে এবং বিশেষজ্ঞদের একটি দল ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here