মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে, বিশেষত নিউইয়র্কের মতো প্রভাবশালী রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল বরাবরই গভীর আগ্রহের জন্ম দেয়। ডেমোক্র্যাটদের দীর্ঘদিনের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই রাজ্যে রিপাবলিকানদের আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা নতুন কিছু নয়। তবে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে নিউইয়র্কের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের এক নতুন কৌশল উন্মোচিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায়, ট্রাম্পের অত্যন্ত আস্থাভাজন ও কট্টর রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিক ২০২৬ সালের নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণা রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের অদৃশ্য ছায়া স্পষ্ট এবং রিপাবলিকানদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান।
আসন্ন ২০২৬ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে, স্টেফানিক বর্তমান ডেমোক্রেটিক দলীয় গভর্নর ক্যাথি হচুলের বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। নিজের প্রার্থিতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ (যা পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত ছিল)-এ এক বিস্ফোরক পোস্টে তিনি গভর্নর হচুলকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বাজে গভর্নর’ হিসেবে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। স্টেফানিকের অভিযোগ, হচুলের অদক্ষ ও ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণেই নিউইয়র্ক আজ এক আর্থিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। তাঁর দাবি, এই রাজ্য এখন ‘দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাজ্যে’ পরিণত হয়েছে, যা সাধারণ নাগরিক ও পরিবারগুলোর ওপর মারাত্মক অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং জীবনযাত্রার মান হ্রাস করছে।
ট্রাম্পের বিশ্বস্ত সেনাপতি: এলিস স্টেফানিক
মাত্র ৪১ বছর বয়সী এলিস স্টেফানিক, যিনি ২০১৪ সাল থেকে নিউইয়র্কের ২১তম কংগ্রেসনাল আসনের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন, মার্কিন রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন অবিচল ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই একজন দৃঢ় কণ্ঠস্বর। ২০১৯ সালে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম দফা অভিশংসনের সম্মুখীন হয়েছিলেন, তখন স্টেফানিক তাঁর অন্যতম প্রধান এবং নির্ভীক সমর্থক হিসেবে সামনে আসেন। কঠিন সময়ে ট্রাম্পের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থন তাকে রিপাবলিকান মহলে এক বিশেষ স্থান করে দিয়েছে এবং ট্রাম্পের আস্থা অর্জন করতে সাহায্য করেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, স্টেফানিকের গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ, যার মাধ্যমে তিনি ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলোতে রিপাবলিকানদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এটি কেবল একটি স্থানীয় নির্বাচন নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নির্বাচনী বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়ে স্টেফানিক তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী গভর্নর হচুলকে জোহরান মামদানি’র প্রতি ‘বিলম্বিত সমর্থনের’ জন্য কঠোর সমালোচনা করেন। (উল্লেখ্য, মূল নিউজের তথ্যে জোহরান মামদানিকে সিটি মেয়র নির্বাচন প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, বাস্তবে তিনি একজন স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান এবং নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের সঙ্গে তার সরাসরি যোগসূত্র অস্পষ্ট)। তবে স্টেফানিক তার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে হচুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দিয়েছেন। তিনি সরাসরি দাবি করেছেন যে, গভর্নর হচুল ‘নিউইয়র্ক পুলিশের তহবিল বন্ধ এবং কর বৃদ্ধির উদ্যোগী কমিউনিস্ট’ জোহরান মামদানির কাছে মাথা নত করেছেন। স্টেফানিকের মতে, মামদানির মতো প্রগতিশীল নেতাদের ‘পুলিশের তহবিল বন্ধ’ করার মতো নীতি এবং ‘আক্রমণাত্মক কর বৃদ্ধির’ প্রস্তাবগুলি নিউইয়র্কে বসবাসরত পরিবারগুলির জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে।
পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি ও ভবিষ্যতের রণক্ষেত্র
কংগ্রেসওম্যান স্টেফানিকের এমন বিস্ফোরক ঘোষণা এবং তীব্র আক্রমণের পরপরই ডেমোক্রেটিক শিবিরেও পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যদিও প্রদত্ত সংবাদে গভর্নর ক্যাথি হচুলের তাৎক্ষণিক বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হয়নি, তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই আক্রমণাত্মক প্রচারণার জবাব দিতে তিনি প্রস্তুত। স্টেফানিকের প্রতিটি অভিযোগের বিরুদ্ধে হচুল এবং তার দল নিজেদের অবস্থানকে জোরালোভাবে তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী দুই বছর নিউইয়র্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বাগযুদ্ধ দেখা যাবে, যেখানে রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। ২০২৬ সালের নভেম্বরের নির্বাচন কেবল একটি গভর্নর পদের লড়াই নয়, এটি ডেমোক্র্যাট-শাসিত নিউইয়র্কে রিপাবলিকানদের পুনরুত্থানের একটি প্রচেষ্টা এবং ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ রাজনীতির প্রভাব বিস্তারের এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হবে।
