More

    আরএসএফ হামলার মুখে এল-ফাশর ছাড়ল ৩২৪০ পরিবার

    সুদান: আরএসএফ-এর হামলার মুখে এল-ফাশর, হাজারো পরিবার বাস্তুচ্যুত; মানবিক সংকট চরমে

    গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সুদানে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে। সম্প্রতি র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর brutal হামলার মুখে সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশর থেকে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেছেন। গত শনিবার (৮ নভেম্বর) একটি স্থানীয় সমন্বয় সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কেবল এল-ফাশর থেকেই ৩ হাজার ২৪০টি পরিবার (প্রায় ১৬ হাজার ২০০ মানুষ) পশ্চিমাঞ্চলের টাওইলা শহরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এই ভয়াবহ বাস্তুচ্যুতি সুদানের চলমান সংঘাতের এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছে, যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

    জীবন রক্ষাকারী সহায়তা অপরিহার্য: ক্রমবর্ধমান চাহিদা

    জেনারেল কো-অর্ডিনেশন ফর ডিসপ্লেসড পারসন্স অ্যান্ড রিফিউজিস (GCDC) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, টাওইলায় আশ্রয় নেওয়া এই ১৬ হাজার ২০০ বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বহুমুখী সহায়তা প্রয়োজন। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

    • খাদ্য: ক্ষুধা ও অপুষ্টি থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ।
    • ওষুধ: রোগের বিস্তার রোধ ও আহতদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র।
    • বিশুদ্ধ পানি: পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি কমাতে নিরাপদ পানীয় জলের উৎস।
    • পয়ঃনিষ্কাশন: স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধে সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
    • আশ্রয়সামগ্রী: প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা পেতে তাঁবু ও অন্যান্য আশ্রয় উপকরণ।
    • মানসিক সহায়তা: সংঘাতের বিভীষিকা ও বাস্তুচ্যুতির মানসিক আঘাত মোকাবিলায় মনস্তাত্ত্বিক সমর্থন।

    সংস্থাটি তীব্র সতর্কতা জারি করে বলেছে যে, বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের অবস্থা ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং মৌলিক চাহিদার এই ব্যাপক ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও কঠিন করে তুলছে। অবিলম্বে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এবং মানবিক সহায়তা না পৌঁছালে এই সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

    অপুষ্টি ও গণহত্যা: সংঘাতের নির্মম বাস্তবতা

    স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, গত ২৬ অক্টোবর আরএসএফ এল-ফাশর দখল করে নেয়, যার পূর্বে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এই দখলদারিত্বের পরপরই মানবিক পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। শুক্রবার আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) জানিয়েছে, এল-ফাশর থেকে বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে অপুষ্টির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপুষ্টির হার চরমে পৌঁছেছে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৬ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৮১ হাজারের বেশি মানুষ এল-ফাশর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের আকস্মিক বাস্তুচ্যুতি স্থানীয় অবকাঠামো ও মানবিক সহায়তার উপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

    সুদানের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের প্রেক্ষাপট

    উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা এখনো থামার কোনো লক্ষণ নেই। এই দীর্ঘস্থায়ী ও brutal সংঘাতে ইতোমধ্যে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন এবং লাখ লাখ বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন। এই যুদ্ধ কেবল প্রাণহানিই ঘটাচ্ছে না, বরং একটি গোটা প্রজন্মকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে এবং সুদানের ভবিষ্যতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই মানবিক বিপর্যয় রোধ করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here