দক্ষিণ লেবাননে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়েছে। গত শনিবার, ৮ নভেম্বর, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী এই অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন কিন্তু অত্যন্ত প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে অন্তত তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনা আঞ্চলিক সংঘাতের ধারাবাহিকতাকে আরও জোরালো করেছে এবং স্থানীয় জনমনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
হামলার বিস্তারিত বিবরণ ও হতাহতের ঘটনা
লেবাননের সরকারি জাতীয় সংবাদ সংস্থা (NNA)-এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার হয়ে নিহতদের মধ্যে দুজন ছিলেন শেবা শহরের সহোদর দুই ভাই। তারা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত মনোরম কিন্তু বিপদসঙ্কুল হারমোন পর্বতের ঢাল সংলগ্ন একটি জনবহুল সড়ক ধরে তাদের গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আকস্মিক বিমান হামলায় তাদের এসইউভি (SUV) গাড়িটি মুহূর্তেই লেলিহান শিখায় জ্বলে ওঠে এবং ঘটনাস্থলেই তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা স্থানীয় জনমনে গভীর শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, যা অঞ্চলের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশকে আরও উষ্ণ করে তুলেছে।
এই দুটি মর্মান্তিক মৃত্যুর বিষয়টি লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে যে, একই দিনে বারাশিত গ্রামে আরেকটি পৃথক বিমান হামলায় একটি গাড়িতে থাকা আরও একজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এই হামলাগুলো নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং মানবিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
ইসরায়েলের দাবি ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের এই আগ্রাসনের পেছনে বরাবরের মতোই নিজস্ব যুক্তি তুলে ধরেছে। তারা দাবি করেছে যে, এই হামলাগুলো লেবাননের প্রতিরোধকামী সংগঠন হিজবুল্লাহর সদস্যদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আরও যোগ করেছে যে, নিহত ব্যক্তিরা ২০২৪ সালে তেল আবিব ও হিজবুল্লাহর মধ্যে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য “হুমকি” সৃষ্টি করছিলেন। এই দাবি করে তারা নিজেদের সামরিক পদক্ষেপের ন্যায্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে।
তবে, আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অজুহাত ইসরায়েলের পূর্ববর্তী হামলার ধারাবাহিকতারই অংশ। যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে ইসরায়েল এই ধরনের অভিযোগের আড়ালে বারবার লেবাননের অভ্যন্তরে নতুন করে হামলা চালিয়ে আসছে, যা চুক্তি ভঙ্গের নামান্তর। এই সামরিক অভিযানগুলো প্রায়শই বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে আরও ভঙ্গুর করে তোলে, যা দীর্ঘমেয়াদী শান্তির সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এর আগে, NNA তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে, দক্ষিণ লেবাননের বিনত জবেইল শহরে একটি যানবাহনকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় কমপক্ষে সাতজন আহত হয়েছিলেন। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও সীমান্তজুড়ে উত্তেজনা এখনো চরমে রয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা ক্রমাগত হুমকির মুখে। এই ধারাবাহিক সহিংসতা লেবাননের দক্ষিণ প্রান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে এক গভীর অনিশ্চয়তা ও ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছে।
