More

    দিল্লির অদূরে বিপুল বিস্ফোরক, একে ৪৭ উদ্ধার, ধৃত কাশ্মীরি চিকিৎসক

    ভারতের রাজধানী দিল্লির সন্নিকটে অবস্থিত হরিয়ানার ফরিদাবাদে একটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ছক বানচাল করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্প্রতি পরিচালিত এক সুসমন্বিত অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণে মারণাস্ত্র এবং বিধ্বংসী বিস্ফোরক, যা একটি বড় ধরনের নাশকতার প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই ঘটনা নিরাপত্তা মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার প্রতি নতুন করে নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

    বিধ্বংসী মারণাস্ত্র ও বিস্ফোরকের বিশাল ভাণ্ডার

    সম্প্রতি ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ, হরিয়ানা পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের একটি সুচারুভাবে পরিচালিত যৌথ অভিযান ফরিদাবাদে এই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্রের মজুত ফাঁস করে দেয়। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর বিশদ বিবরণ উদ্বেগজনক। এর মধ্যে রয়েছে:

    • ১৪টি বস্তাভর্তি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, যার সম্মিলিত ওজন ১০০ কেজিরও বেশি। এই রাসায়নিক বিস্ফোরক তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
    • একটি অত্যাধুনিক একে-৪৭ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, যা সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত একটি মারণাস্ত্র।
    • ৮৪টি তাজা কার্তুজ, যা উদ্ধারকৃত রাইফেলের জন্য ব্যবহৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
    • ৫ লিটার বিপজ্জনক রাসায়নিক উপাদান, যা বিস্ফোরকের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক।
    • বিভিন্ন ধরনের টাইমার এবং অন্যান্য সরঞ্জাম, যা দিয়ে কমপক্ষে ৩৫০ কিলোগ্রাম আইইডি (Improvised Explosive Device) তৈরি করা সম্ভব বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পরিমাণ বিস্ফোরক একটি বড় শহর বা জনবহুল এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনে সক্ষম।

    পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, এই মারণাস্ত্র ও বিস্ফোরক কোনো নাশকতামূলক কাজের জন্যই গোপনে জড়ো করা হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করা।

    অভিযানের প্রেক্ষাপট এবং তদন্তের অগ্রগতি

    ফরিদাবাদের পুলিশ কমিশনার সত্যেন্দ্র গুপ্ত গণমাধ্যমকে অবহিত করেন যে, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের সাথে নিবিড় সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমেই ফরিদাবাদ পুলিশ এই গুরুত্বপূর্ণ অভিযান সফল করতে সক্ষম হয়েছে। এই সাফল্য উদযাপনের পাশাপাশি অভিযানের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে সোমবার একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পুলিশ এখন নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে যে, এই নাশকতার ছক কাশ্মীর কেন্দ্রিক ছিল নাকি ভারতের অন্য কোনো অঞ্চলে বড় ধরনের হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। এটি উদঘাটনের জন্য গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছেন।

    কমিশনার আরও জানান, এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র ফরিদাবাদের ধাউজ গ্রামে এক চিকিৎসকের ভাড়া করা বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটি তদন্তকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে কাজ করছে।

    মূল অভিযুক্ত চিকিৎসক মুজাহিল শাকিল

    যে চিকিৎসকের বাড়ি থেকে এই ভয়াবহ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁর নাম মুজাহিল শাকিল। তিনি মূলত ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা। যদিও তিনি ফরিদাবাদেই তাঁর ডাক্তারি পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন, বিশেষত আল ফালাহ্ স্কুল অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার থেকে তিনি ডিগ্রি লাভ করেন। জানা গেছে, গত তিন মাস আগে ডা. শাকিল ফরিদাবাদের ধাউজ গ্রামের ওই বাড়িটি ভাড়া নেন, যা পরে মারণাস্ত্রের মজুতখানায় পরিণত হয়। এই ভাড়া বাড়িটিই ছিল তাদের গোপন আস্তানা, যেখান থেকে এই সব সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।

    গ্রেপ্তার ও পূর্ববর্তী সংযোগ

    ডা. মুজাহিল শাকিলকে গত ৩০ অক্টোবর তারিখে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। শাকিলের গ্রেপ্তারের আগে, আরও একজন কাশ্মীরি চিকিৎসক আদিল আহমদ রাঠেরকে আইনের আওতায় আনা হয়েছিল। আদিল আহমদের বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র পাচারের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এই দুই কাশ্মীরি চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই ডা. শাকিলকে নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ ফরিদাবাদে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্রের সন্ধান পায়। এই ঘটনাটি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এর পেছনের মূল চক্রকে উন্মোচন করার জন্য তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here