ভারতের প্রধান সন্ত্রাসবিরোধী তদন্ত সংস্থা **স্টেট ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এসআইএ)** সম্প্রতি ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সুপরিচিত সংবাদমাধ্যম **দ্য কাশ্মীর টাইমস**-এর অফিসে অভিযান চালিয়েছে। একটি গুরুতর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ভিত্তিতে এই তল্লাশি চালানো হয়, যা স্থানীয় গণমাধ্যম মহলে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এসআইএ-এর অভিযোগ এবং তদন্তের প্রেক্ষাপট
**এসআইএ**-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা **দ্য কাশ্মীর টাইমস**-এর বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মীরের অভ্যন্তরে ও বাইরে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং রাষ্ট্রবিরোধী চক্রগুলির সঙ্গে অপরাধমূলক ষড়ন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এই অভিযোগের সূত্র ধরেই সংবাদমাধ্যমটির দফতরে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়, যা এই চলমান তদন্ত প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সন্ত্রাসবাদ দমনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই সংস্থাটি এমন অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ সত্যতা উদঘাটনে বদ্ধপরিকর।
কাশ্মীর টাইমসের পাল্টা দাবি ও অবস্থান
তবে, **দ্য কাশ্মীর টাইমস** কর্তৃপক্ষ **এসআইএ**-এর সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক বলে দৃঢ়ভাবে দাবি করেছে। সংবাদমাধ্যমটি জোরালোভাবে জানিয়েছে যে, যে অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটি গত চার বছর ধরে বন্ধ ছিল এবং সেখানে কোনো ধরনের কার্যক্রমই পরিচালিত হচ্ছিল না। ১৯৫৪ সাল থেকে দীর্ঘ পথচলায় সংবাদমাধ্যমটি তার বস্তুনিষ্ঠতার জন্য পরিচিত। ২০২২ সালে তাদের আরেকটি অফিসে সিলগালা করে দেওয়ার পর থেকে **দ্য কাশ্মীর টাইমস** কেবল অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। শুক্রবার এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে, সংবাদমাধ্যমটি অভিযোগ করেছে যে, এসব পদক্ষেপ তাদের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, ভীতি প্রদর্শন করতে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
তল্লাশি অভিযানে প্রাপ্তি ও সম্ভাব্য যোগসূত্র
তল্লাশি অভিযানের সময়, **এসআইএ** অফিস থেকে একটি রিভলবার, বেশ কয়েকটি তাজা বুলেট এবং ব্যবহৃত বুলেটের খোসা উদ্ধার করেছে। তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে যে, এই অস্ত্রগুলি সম্ভবত অবৈধভাবে রাখা হয়েছিল এবং এগুলি চরমপন্থী বা রাষ্ট্রবিরোধী নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটির সম্ভাব্য যোগসূত্রের ইঙ্গিত বহন করে। অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রের উপস্থিতি অভিযোগের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে **এসআইএ** জানিয়েছে।
মালিকের বাড়িতেও অভিযান এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
একই সঙ্গে, কর্তৃপক্ষ **দ্য কাশ্মীর টাইমস**-এর মালিক **প্রবোধ জামওয়াল**-এর বাড়িতেও পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছে। এই ঘটনাটি শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমটির কার্যালয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এর পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে সংবাদকর্মীদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার সংগঠন **কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)** এই অভিযানকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এক বিবৃতিতে **সিপিজে** আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই ধরনের পদক্ষেপ জম্মু ও কাশ্মীরে সংবাদমাধ্যমের উপর চাপ আরও বাড়াবে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। এই ঘটনাটি অঞ্চলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ভঙ্গুর চিত্রটিকে পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
