More

    মিসরের গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে হামাসের শীর্ষ প্রতিনিধিদলের বৈঠক

    ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি আবারও চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। উভয় পক্ষই অবিরতভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উত্থাপন করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে। এমন এক সংকটময় মুহূর্তে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ এবং গাজার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে হামাসের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল রবিবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে দেশটির প্রভাবশালী গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছে। হামাসের পক্ষ থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে, যা বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক মহলে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।

    মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাত নিরসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গত মাসে কার্যকর হওয়া প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এই তিন দেশই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তা এই মধ্যস্থতাকারীদের জন্যেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

    যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

    একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, মিসরের গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে তাদের প্রতিনিধিদলের বৈঠকে তারা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে নিজেদের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে একই সঙ্গে হামাস জোরালো অভিযোগ করেছে যে, ইসরায়েল বারবার চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘন করে চলেছে, যার ফলে সমগ্র যুদ্ধবিরতি চুক্তিই এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এই পারস্পরিক দোষারোপের ফলে শান্তির প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠছে।

    হামাসের প্রতিনিধিদলে নির্বাসিত সিনিয়র নেতা খলিল আল-হায়া উপস্থিত ছিলেন। তিনি মধ্যস্থতাকারীদের তত্ত্বাবধানে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বন্ধ করার জন্য এবং এই ধরনের প্রতিটি ঘটনা সঠিকভাবে নথিবদ্ধ করার জন্য একটি ‘স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া’ নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। আল-হায়ার এই প্রস্তাব যুদ্ধবিরতি কার্যকরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপর জোর দিচ্ছে।

    রাফাহ সুড়ঙ্গে আটকা পড়া যোদ্ধাদের নিয়ে উদ্বেগ

    বৈঠকে হামাস গাজার দক্ষিণের রাফাহ অঞ্চলের সুড়ঙ্গগুলোতে অবস্থানরত তাদের যোদ্ধাদের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান খুঁজে বের করার জন্য মিসরের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, এই যোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যা তাদের নিরাপত্তা ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এই বিষয়টি মানবিক এবং কৌশলগত উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত সংবেদনশীল।

    চলতি মাসের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, গাজার ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভিন্ন সুড়ঙ্গে আটকা পড়া হামাস যোদ্ধাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা ইতিপূর্বেই একটি কার্যকর সমাধান খুঁজছেন। এই নতুন বৈঠক সেই প্রচেষ্টারই ধারাবাহিকতা, যা প্রমাণ করে যে আটকা পড়া যোদ্ধাদের বিষয়টি শান্তির প্রক্রিয়ায় একটি জটিল বাধা সৃষ্টি করছে।

    এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গত শনিবার গাজার ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এক হামাস যোদ্ধা প্রবেশ করে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং হামাসের পাঁচজন যোদ্ধাকে নিকেশ করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ভূখণ্ডে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের আশঙ্কা কতটা প্রবল। উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে মধ্যস্থতাকারীদের আরও কঠিন ও নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে, অন্যথায় বর্তমান পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here