যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য প্রদত্ত সাময়িক আইনি সুরক্ষা, যা
টিপিএস বাতিলের পেছনের যুক্তি
ট্রাম্প প্রশাসন গত সোমবার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে যুক্তি দেখিয়েছে যে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এতটাই উন্নত হয়েছে যে দেশটির নাগরিকেরা এখন নিরাপদে যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই রাষ্ট্রে ফিরে যেতে পারবেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সামরিক শাসক গোষ্ঠীর পরিকল্পিত নির্বাচনের আয়োজনকে পরিস্থিতি উন্নতির একটি প্রধান সূচক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মতে, এই ধরনের উদ্যোগ দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত বহন করে।
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি: উদ্বেগ ও বাস্তবতা
তবে, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে যারা নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য হতে পারেন, তাদের মধ্যে এই আশঙ্কা গভীর হয়েছে। কারণ, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই মিয়ানমার ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের মধ্যে নিমজ্জিত। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়েছে, যা হাজার হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে, প্রশাসনের ‘নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের’ যুক্তি বাস্তবের সঙ্গে কতটা সংগতিপূর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সিদ্ধান্ত ও এর কারণ
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে নিবিড় পরামর্শ শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মিয়ানমারের জন্য টিপিএস-এর আর প্রয়োজন নেই। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে। ডিএইচএস-এর মতে, টিপিএস মূলত একটি সাময়িক ব্যবস্থা, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সশস্ত্র সংঘাতের মতো অসাধারণ ও ক্ষণস্থায়ী পরিস্থিতির কারণে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত হয়। তাদের দাবি, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখন সেই সংজ্ঞার আওতার বাইরে চলে এসেছে।
সুবিধাভোগীদের ওপর প্রভাব
বর্তমানে প্রায় চার হাজার মিয়ানমারের নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে টিপিএস-এর সুবিধাভোগী হিসেবে রয়েছেন। ডিএইচএস জানিয়েছে যে, এই সুবিধা আগামী ২৬ জানুয়ারি (তারিখের বছর উল্লেখ না থাকলেও, এটি নিকটবর্তী ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে) শেষ হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে টিপিএস সুবিধাভোগীরা তাদের কাজের অনুমতি, থাকার বৈধতা এবং নির্বাসন থেকে সুরক্ষা হারাবেন, যা তাদের জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।
মন্ত্রীর বক্তব্য ও নীতিগত অবস্থান
মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম তার বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত টিপিএসকে তার মূল সাময়িক অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে।” তিনি মিয়ানমারের আরেকটি নাম ‘বার্মা’ ব্যবহার করে বলেন, “বার্মার পরিস্থিতি এতটাই উন্নত হয়েছে যে সেখানে নাগরিকেরা নিরাপদে ফিরতে পারেন। তাই আমরা সাময়িক স্বীকৃতির অবসান ঘটাচ্ছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “বার্মা তার সরকারব্যবস্থা ও স্থিতিশীলতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। এর মধ্যে আছে জরুরি অবস্থার অবসান, স্বচ্ছ ও মুক্ত নির্বাচনের পরিকল্পনা এবং সফলভাবে সংঘাত সমাধান।” প্রশাসনের এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মিয়ানমারের মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার সঙ্গে কতটা মেলে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।
