More

    ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী

    গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে কেনিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে। দেশটির দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী বিরোধীদলীয় নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গা ৮০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বুধবার স্থানীয় পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই দুঃসংবাদ নিশ্চিত করেছে।

    দেবমাথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-কে জানিয়েছে, চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারতে অবস্থান করছিলেন রাইলা ওডিঙ্গা। সেখানেই হঠাৎ করে তিনি তীব্র হৃদরোগে আক্রান্ত হন। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন। কেরালা রাজ্যের এরনাকুলাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কৃষ্ণন এম, ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, বুধবার সকালে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছিলেন ওডিঙ্গা। সে সময় তার পরিবারের সদস্য এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও তার সঙ্গেই ছিলেন। হঠাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

    কেনিয়ার রাজনীতিতে এক দীর্ঘ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি

    রাইলা ওডিঙ্গা কেবল একজন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন কেনিয়ার রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যিনি সুদীর্ঘকাল ধরে দেশটির রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি পাঁচবার কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন—২০০৭, ২০১৩, ২০১৭ এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে। যদিও কোনো বারই তিনি জয়ের মুকুট পরতে পারেননি, তবে প্রতিটি নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত, ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সৃষ্ট বিবাদ দেশজুড়ে ভয়াবহ সহিংসতা উসকে দিয়েছিল, যেখানে মর্মান্তিকভাবে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মানুষের প্রাণহহানি ঘটেছিল। এই ঘটনা কেনিয়ার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে, যা ওডিঙ্গার রাজনৈতিক যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকেও তুলে ধরে।

    কেনিয়ার গণতান্ত্রিক যাত্রায় রাইলা ওডিঙ্গার অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৯১ সালে দেশটিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। একইসাথে, ২০১০ সালে দেশের নতুন সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রেও তিনি এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেন, যা কেনিয়ার ভবিষ্যত রাজনৈতিক কাঠামোকে সুসংহত করে। তার অনুসারী ও সাধারণ মানুষ তাকে কেবল একজন নেতা হিসেবেই দেখত না, তারা তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ‘বাবা’ (পিতা) অথবা ‘আগওয়াম্বো’ (যার হাতে ক্ষমতা) নামে সম্বোধন করত। এই ডাকগুলো তার জনপ্রিয়তা এবং জনগণের হৃদয়ে তার স্থান নির্দেশ করে।

    নেতৃবৃন্দের শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

    রাইলা ওডিঙ্গার প্রয়াণে কেনিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। কেনিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক শোকবার্তায় ওডিঙ্গার অবদানকে স্মরণ করেন এবং তার পরিবার ও অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রুটো সশরীরে রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত ওডিঙ্গার বাসভবনে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সান্ত্বনা জ্ঞাপন করেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি ডেভিড মারাগাও ওডিঙ্গার মৃত্যুতে গভীর মর্মাহত হয়ে শোক প্রকাশ করেছেন।

    কেবল কেনিয়া নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও শ্রদ্ধা ও শোক জানানো হয়েছে। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এক শোকবার্তায় রাইলা ওডিঙ্গাকে ‘আফ্রিকার গণতন্ত্রের এক দৃঢ় কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আফ্রিকান মহাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার রক্ষায় ওডিঙ্গার অসামান্য ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here