ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় মস্কোর অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওয়াশিংটন মূলত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর চাপ বাড়ানোর মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে চাইছে। মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় জড়িত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই পদক্ষেপের পেছনের কৌশলগত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতাকে সরাসরি আঘাত করে তাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রণীত হচ্ছে।
শুধু নিষেধাজ্ঞাই নয়, ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ ব্যবহারের বিষয়েও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা জোরালো হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই রাশিয়ার হিমায়িত সম্পদ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা তহবিলে ব্যবহারের একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। এমনকি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের নিজস্ব এখতিয়ারে থাকা রাশিয়ার সম্পত্তি ব্যবহার করে কিয়েভকে প্রয়োজনীয় সামরিক ও মানবিক সহায়তা প্রদানের বিষয় গভীরভাবে বিবেচনা করছে। এই পদক্ষেপগুলো রাশিয়ার উপর বহুমুখী চাপ সৃষ্টির একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ।
ট্রাম্পের ভারসাম্যের নীতি: নিষেধাজ্ঞা ও শান্তির প্রচেষ্টা
নিজেকে ‘বিশ্ব শান্তিদূত’ হিসেবে উপস্থাপনকারী প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার তিন বছরের দীর্ঘ যুদ্ধ শেষ করা তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি জটিল ও কঠিন প্রমাণিত হয়েছে। এই সংঘাতের গভীরতা এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাঁর পূর্বের ধারণার চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জিং।
২৫শে অক্টোবর, শনিবার দোহায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে জানান, “যতক্ষণ না শান্তিচুক্তির বাস্তব এবং বিশ্বাসযোগ্য সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, আমি পুতিনের সঙ্গে আর দেখা করব না। অহেতুক সময় নষ্ট করতে চাই না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, গত আগস্টে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত তাদের পূর্ববর্তী বৈঠকে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত না হওয়ায় তিনি ফের বৈঠক করতে অনিচ্ছুক। ট্রাম্পের এই অবস্থান তাঁর একাধারে শান্তি আলোচনার আগ্রহ এবং একই সাথে অর্থহীন বৈঠক পরিহারের নীতিকে প্রতিফলিত করে।
ওয়াশিংটনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে যে এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নই পরবর্তী বড় পদক্ষেপ নেবে। এই পদক্ষেপ নতুন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আকারে আসতে পারে অথবা রাশিয়ার উপর নতুন শুল্ক আরোপের মাধ্যমে হতে পারে, যা মস্কোর অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করবে। এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা রাশিয়ার উপর পশ্চিমা বিশ্বের সম্মিলিত চাপ বাড়াতে সহায়ক হবে।
লক্ষ্যে তেল ও ব্যাংকিং খাত: রাশিয়ার অর্থনীতির প্রাণভোমরা
প্রস্তাবিত নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত রাশিয়ার ব্যাংকিং খাত এবং তেল অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে প্রণীত হবে। এই দুটি খাত বর্তমানে মস্কোর অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং সামরিক ব্যয় মেটাতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। এই খাতগুলোতে আঘাত হানার মাধ্যমে রাশিয়ার রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং তাদের যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষমতা খর্ব হবে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন।
দুজন মার্কিন সূত্রের তথ্য মতে, ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা সম্প্রতি ওয়াশিংটনকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাবে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে সম্পূর্ণভাবে ডলার-ভিত্তিক বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদি এই প্রস্তাব কার্যকর হয়, তবে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক লেনদেন ও বাণিজ্য কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে, যা তাদের অর্থনীতির উপর সুদূরপ্রসারী ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে। এই ধরনের পদক্ষেপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রাশিয়ার অবস্থানকে আরও প্রান্তিক করে তুলবে এবং তাদের জন্য নতুন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
