তুরস্ক তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং সামরিক প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় একের পর এক নতুন মাত্রা যোগ করছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটি সম্প্রতি একটি অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যা তাদের সামরিক শক্তি ও স্বনির্ভরতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি গত শুক্রবার পরিচালিত হয়। এর পেছনে ছিল তুরস্কের অন্যতম প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, রকেটসান, যাদের নিরলস গবেষণা ও উন্নয়নের ফসল এই নতুন প্রযুক্তি। এই সফল উৎক্ষেপণের খবর জনসমক্ষে আনেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সচিবালয়ের প্রধান হালুক গোরগুন। তিনি নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এনসোশ্যাল’-এর মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়ে।
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার তাৎপর্য
গোরগুন তাঁর পোস্টে এই ঘটনাকে শুধু একটি প্রযুক্তিগত পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ না করে এটিকে আরও গভীর তাৎপর্যপূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এটি একটি নীরব প্রস্তুতি, একটি মুহূর্ত…এবং আকাশে আঁকা একটি স্বাক্ষর। একটি সুন্দর দিন, আরও একটি সফল পরীক্ষা।’ তাঁর এই মন্তব্য তুরস্কের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি তাদের গভীর অঙ্গীকার এবং আত্মবিশ্বাসেরই প্রতিফলন।
এই ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা নিয়ে বলতে গিয়ে প্রতিরক্ষা শিল্প সচিবালয়ের প্রধান আরও যোগ করেন যে, সুনির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এর পাল্লা ক্রমাগত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। একইসাথে, লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানার সক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হচ্ছে, যা আধুনিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত সুবিধা প্রদান করবে। তিনি রকেটসান এবং এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সকল প্রকৌশলী ও কর্মীদের তাদের অসামান্য অবদানের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান, যা এই সফলতার মূল ভিত্তি।
পূর্ববর্তী সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
উল্লেখ্য, তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে এটিই প্রথম সাফল্য নয়। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটি তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত ‘তাইফুন’ স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার একটি সফল পরীক্ষা চালিয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল এবং তুরস্কের সামরিক শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল।
রকেটসানের প্রধান, মুরাত ইকিনচি, গত জুলাই মাসেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাইফুন ক্ষেপণাস্ত্রের আরও উন্নত সংস্করণ ‘ব্লক-৪’-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ অদূর ভবিষ্যতে শুরু হবে। বর্তমানের এই সফল পরীক্ষা সেই অগ্রযাত্রারই একটি অংশ এবং তুরস্কের সামরিক প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ পথনকশা তৈরিতে এটি আরও গতি আনবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই ধারাবাহিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা তুরস্ককে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী ও আত্মনির্ভরশীল অবস্থানে নিয়ে যাবে।
