দেশের মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার আবারো ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে, যা অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কিছুটা স্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হলেও, গত তিন কার্যদিবসে ব্যাংকগুলোতে ডলারের গড় মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে ৬০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক গতিপ্রবাহে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং মুদ্রাবাজারে একটি সুনির্দিষ্ট চাপ নির্দেশ করছে।
ব্যাংকিং খাতে ডলারের বিনিময় মূল্যের চিত্র
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলারের গড় বিনিময় মূল্য ছিল ১২২ টাকা ১০ পয়সা। তবে, মাত্র তিন কার্যদিবসের ব্যবধানে গতকাল রবিবার তা বৃদ্ধি পেয়ে ১২২ টাকা ৮০ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। এর পাশাপাশি, একই দিনে দেশের কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৯০ পয়সা দরেও ডলার লেনদেন করেছে, যা বাজারের অস্থিরতাকে আরো স্পষ্ট করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলারের ব্যাপক চাহিদা এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা
ব্যাংকের পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেও ডলারের বিনিময় মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল রবিবার আন্তঃব্যাংক বাজারে প্রতি ডলারের সর্বনিম্ন দর ছিল ১২২ টাকা ৫৫ পয়সা এবং সর্বোচ্চ দর ছিল ১২২ টাকা ৭০ পয়সা। এদিন ডলারের গড় বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২২ টাকা ৬৩ পয়সা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক বাজারে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় মূল্য ছিল ১২২ টাকা ৬০ পয়সা, যা বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি সামগ্রিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতার বার্তা দিচ্ছে।
ডলারের নিম্নমুখী প্রবণতা থেকে বর্তমান পরিস্থিতি
বিগত কয়েক মাস ধরে দেশের ডলারের বাজার তুলনামূলকভাবে নিম্নমুখী ছিল। এই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বাজার থেকে ডলার ক্রয় করে এর বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে হয়েছিল, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকেই ডলারের দামে পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যায় এবং তা বাড়তে শুরু করে। এই পরিবর্তন আকস্মিক হলেও, এর পেছনে একাধিক অর্থনৈতিক কারণ সক্রিয় রয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যের কারণসমূহ
ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্মিলিতভাবে প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ে কাঙ্ক্ষিত গতি না থাকা, যার ফলে দেশে ডলারের সরবরাহ কিছুটা কমে এসেছে। যদিও এই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে, তবে তা সামগ্রিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমদানি ব্যয়ের লাগামহীন বৃদ্ধি। পণ্য ও সেবার আমদানির জন্য দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে, যা শেষ পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান হ্রাস এবং বিনিময় মূল্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। এই সমন্বিত প্রভাবই ডলারের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার প্রধান নিয়ামক।
