নাইজেরিয়ার কিংবদন্তী লেখক ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ওলে সোয়িঙ্কার মার্কিন ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আফ্রিকার প্রথম সাহিত্যে নোবেল জয়ী হিসেবে পরিচিত এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বের ভিসা বাতিলের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ আলোচনা তৈরি করেছে, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির প্রেক্ষাপটে।
সাহিত্যিক ওলে সোয়িঙ্কার পরিচয়
ওলে সোয়িঙ্কা শুধু একজন লেখক বা নাট্যকার নন, তিনি আফ্রিকান সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অবিসংবাদিত প্রতীক। ১৯৮৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে তিনি আফ্রিকান মহাদেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে এই বিরল সম্মান লাভ করেন। তার লেখনী গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষণ, মানবতাবাদ এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অনুসন্ধানে সমৃদ্ধ। সোয়িঙ্কার এই অর্জন বিশ্বজুড়ে আফ্রিকান কণ্ঠস্বরকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিল, যা তার সাহিত্যিক অবদানকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
ভিসা বাতিলের ঘোষণা ও ‘অদ্ভুত প্রেমপত্র’
গতকাল মঙ্গলবার নাইজেরিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী লাগোসে অবস্থিত ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কঙ্গিস হার্ভেস্ট গ্যালারিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় ওলে সোয়িঙ্কা নিজেই এই চাঞ্চল্যকর খবরটি প্রকাশ্যে আনেন। তিনি উপস্থিত দর্শকদের সামনে গত ২৩ অক্টোবর স্থানীয় মার্কিন কনস্যুলেট থেকে তার কাছে আসা একটি নোটিশের কিছু অংশ পড়ে শোনান। নোটিশটিকে তিনি স্বভাবসুলভ হাস্যরসের ভঙ্গিতে ‘অদ্ভুত প্রেমপত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন, যা উপস্থিত জনতার মধ্যে কৌতুকের ঢেউ তোলে।
ওই নোটিশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সোয়িঙ্কার মার্কিন ভিসা বাতিল করা হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাকে তার পাসপোর্ট সহ স্থানীয় মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তবে তার আগে কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি ই-মেইল পাঠিয়ে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ব্যস্ততা ও কৌতুকপূর্ণ প্রস্তাব
এই নির্দেশনার জবাবে সোয়িঙ্কা দর্শকদের সঙ্গে মজা করতে করতে বলেন যে, এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অনুরোধটি পূরণ করার মতো সময় তিনি এখনো পাননি। তার চিরচেনা সরস ভঙ্গিতে তিনি বলেন, “হাস্যরসবোধসম্পন্ন মানুষদের আমি সত্যিই পছন্দ করি। আর এটি নিঃসন্দেহে আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে হাস্যকর বাক্য বা অনুরোধগুলোর একটি।” এরপর তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে এক কৌতুকপূর্ণ প্রস্তাব রাখেন, “আপনাদের মধ্যে কেউ কি স্বেচ্ছায় আমার হয়ে কাজটি করে দেবেন? আমার পাসপোর্টটা কি কেউ একটু কষ্ট করে পৌঁছে দেবেন? কারণ আমি এই মুহূর্তে খানিকটা ব্যস্ততা ও তাড়াহুড়ার মধ্যে আছি।” তার এই মন্তব্য গোটা গ্যালারিতে হাসির রোল তোলে, যা এই গুরুতর ঘটনাকেও একটি হালকা মেজাজ দিতে সাহায্য করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি ও এর প্রভাব
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওলে সোয়িঙ্কার মার্কিন ভিসা গত বছরই ইস্যু করা হয়েছিল, যখন জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এরপর থেকে মার্কিন রাজনৈতিক পটভূমিতে পরিবর্তন এসেছে; ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন এবং দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। জানুয়ারিতে তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতির ওপর অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এমন অসংখ্য ব্যক্তির ভিসা ও গ্রিনকার্ড বাতিল করেছে, যাদের নীতিগত অবস্থান বা কর্মপন্থা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ঘোষিত নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করা হচ্ছে। সোয়িঙ্কার মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তির ভিসা বাতিল হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের সেই বিস্তৃত নীতিরই অংশ, যা ভিন্নমত পোষণকারী বা সমালোচনাকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি প্রচেষ্টা।
আফ্রিকান সাহিত্যের এই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বের ভিসা বাতিলের ঘটনা বিশ্বজুড়ে বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক মহলে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে, যা বাক স্বাধীনতা এবং অভিবাসন অধিকারের উপর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
