More

    হামাস নিরস্ত্র হোক, চান না ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি

    ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চলমান সংঘাত ও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে জনমতের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিত্র উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক জরিপে, যা ফিলিস্তিনিদের গভীর আবেগ ও বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এই জরিপ অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নিরস্ত্রীকরণের ঘোরবিরোধী অধিকাংশ ফিলিস্তিনি। শুধু তাই নয়, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটাবে কিনা, সে বিষয়েও ফিলিস্তিনি জনমনে প্রবল অবিশ্বাস ও গভীর সংশয় বিদ্যমান।

    ফিলিস্তিনি জনগণের মনোভাব অনুধাবনের লক্ষ্যে খ্যাতনামা ফিলিস্তিনি নীতি ও জরিপ গবেষণাকেন্দ্র (পিসিপিএসআর) অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজাজুড়ে একটি বিস্তারিত জরিপ পরিচালনা করেছে। এই গবেষণার ফলাফল বিস্ময়করভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে তুলে ধরেছে। পিসিপিএসআর-এর তথ্যমতে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ফিলিস্তিনিদের প্রায় ৭০ শতাংশই দ্বিধাহীনভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তারা হামাসের নিরস্ত্রীকরণের কঠোর বিরোধী। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, হামাস নিরস্ত্র না হলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে পুনরায় সামরিক হামলার আশঙ্কা থাকার পরেও তারা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনটির অস্ত্র ত্যাগ করার কোনো যৌক্তিকতা দেখেন না। এটি তাদের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি অবিচল আস্থা এবং আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি গভীর অঙ্গীকারের স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।

    হামাসের নিরস্ত্রীকরণ: অঞ্চলের ভিত্তিতে মতামতের ভিন্নতা

    হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা অঞ্চলের ভিত্তিতে কিছুটা ভিন্নতা দেখালেও, সার্বিকভাবে এই অনীহা অত্যন্ত শক্তিশালী। জরিপের প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই বিরোধিতার মাত্রা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ছিল আরও তীব্র। সেখানে জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ ফিলিস্তিনি সরাসরি বলেছেন যে, তারা চান হামাসের সশস্ত্র শাখা ‘ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড’ তাদের অস্ত্রসম্ভার অক্ষত রাখুক। এই পরিসংখ্যান বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, অধিকৃত পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) অধীন পরিচালিত হয়, যেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে প্রভাবশালী দল ফাতাহর সঙ্গে হামাসের ঐতিহাসিক মতবিরোধ রয়েছে। এমন রাজনৈতিক বিভেদের মাঝেও পশ্চিম তীরের জনগণের এই ধরনের ঐক্যবদ্ধ মনোভাব ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতি তাদের সর্বজনীন সমর্থনের প্রমাণ।

    অন্যদিকে, গাজা উপত্যকায়, যা বর্তমানে হামাসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখানকার ৫৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা করেছেন। যদিও এই হার পশ্চিম তীরের তুলনায় কিছুটা কম, তবুও এটি গাজার জনগণের মধ্যেও সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রতি একটি উল্লেখযোগ্য সমর্থন নির্দেশ করে। এই পার্থক্য অঞ্চলভেদে রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার প্রভাবেও হতে পারে, তবে উভয় অঞ্চলেই নিরস্ত্রীকরণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী জনমত রয়েছে।

    জরিপের পদ্ধতি ও অংশগ্রহণকারী

    এই গুরুত্বপূর্ণ জরিপটি গত ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর মাসব্যাপী পরিচালিত হয় এবং এর ফলাফল গত মঙ্গলবার জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণার জন্য মোট ১,২০০ ফিলিস্তিনি তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন, যা ফিলিস্তিনি সমাজের একটি বিস্তৃত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এদের মধ্যে ৭৬০ জন ছিলেন অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাসিন্দা এবং ৪৪০ জন ছিলেন গাজা উপত্যকার নাগরিক। এই ব্যাপক অংশগ্রহণ জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভুলতাকে আরও শক্তিশালী করেছে।

    শান্তি প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর সংশয়

    জরিপের ফলাফল থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তা হলো তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের গভীর ও সুদূরপ্রসারী সংশয়। ফিলিস্তিনি জনগণ বিশ্বাস করেন না যে এই পরিকল্পনা ইসরায়েলকে গাজায় চলমান যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে উৎসাহিত করবে। বরং, তাদের কাছে এই ধরনের শান্তি প্রস্তাব প্রায়শই ইসরায়েলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় এবং ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে বলে মনে হয়। এই অবিশ্বাস কেবল বর্তমান পরিস্থিতির নয়, বরং দশকের পর দশক ধরে চলে আসা সংঘাত, ভাঙা প্রতিশ্রুতি এবং অধরা শান্তির প্রেক্ষাপটে জন্ম নিয়েছে। ফিলিস্তিনিরা মনে করেন, সত্যিকারের শান্তি তখনই আসবে যখন তাদের সমস্ত অধিকার, বিশেষ করে তাদের প্রতিরোধ ও আত্মরক্ষার অধিকারকে সম্মান করা হবে এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here