More

    বোনকে খুন করে লাশ বস্তায় ভরেন, পুলিশ জিজ্ঞেস করলে জানান বস্তায় গম

    ভারতের উত্তর প্রদেশের গোরখপুর থেকে উঠে আসা এক মর্মান্তিক ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এক যুবক তাঁর আপন বোনকে নির্মমভাবে হত্যা করে দেহ বস্তাবন্দী করে ফেলে আসার সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে চরম ঔদ্ধত্যের সাথে মিথ্যা তথ্য দেয়। এই ঘটনা কেবল নৃশংসতাই নয়, এক ভাইয়ের গভীর প্রতারণা ও পাশবিকতার চিত্র তুলে ধরেছে, যা সমাজকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে পারিবারিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতা নিয়ে।

    মর্মান্তিক ঘটনার মূল চরিত্র ও প্রেক্ষাপট

    এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূল অভিযুক্ত হলেন বত্রিশ বছর বয়সী রাম আশিস নিষাদ, যিনি উত্তর প্রদেশের গোরখপুর জেলার বাসিন্দা। তাঁর উনিশ বছর বয়সী বোন নীলমকে তিনি হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এক মর্মস্পর্শী পারিবারিক বিবাদের কথা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সরকারি ক্ষতিপূরণের অর্থ।

    জানা যায়, আশিসের বাবা চিংকু নিষাদ একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বাবদ ছয় লক্ষ রুপি ক্ষতিপূরণ হিসেবে পেয়েছিলেন। এই বিশাল অঙ্কের অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হবে, তা নিয়েই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র বিবাদ শুরু হয়।

    হত্যার কারণ: অর্থ নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব

    রাম আশিসের ক্ষোভের মূল কারণ ছিল যখন তিনি জানতে পারেন যে, এই ক্ষতিপূরণের অর্থ তাঁর বোনের বিয়েতে খরচ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তই সম্ভবত তাঁর ভেতরের পৈশাচিক প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে, যা শেষ পর্যন্ত এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের জন্ম দেয়। পারিবারিক সম্পত্তি বা অর্থের বন্টন নিয়ে এমন ধরনের সহিংসতা প্রায়শই দেখা গেলেও, আপন বোনের প্রতি এমন নৃশংসতা সত্যিই বিরল ও হৃদয়বিদারক।

    নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমের প্রচেষ্টা

    পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার রাম আশিস অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় তাঁর বোন নীলমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। একটি কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে নীলমের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়। হত্যার পর অভিযুক্ত এখানেই ক্ষান্ত হননি; দেহটিকে বিকৃত করে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেঙে তিনি সেটি একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল অপরাধের কোনো চিহ্ন না রাখা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দেওয়া।

    এরপর অপরাধের চিহ্ন মুছে ফেলার লক্ষ্যে রাম আশিস ওই মৃতদেহপূর্ণ বস্তাটি তাঁর মোটরসাইকেলের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। গোরখপুর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের কুশীনগরের উদ্দেশ্যে তিনি রওনা হন। উদ্দেশ্য ছিল, জনমানবহীন কোনো স্থানে বস্তাটি ফেলে আসা। তিনি কুশীনগরের একটি নির্জন আখখেতে বস্তাটি ফেলে আসেন, যা তাঁর জঘন্য পরিকল্পনার অংশ ছিল।

    পুলিশের মুখোমুখি: ‘গম আছে’ মিথ্যে উত্তর

    তবে এই দীর্ঘ যাত্রাপথে এক নাটকীয় ঘটনা ঘটে। কুশীনগরের দিকে যাওয়ার সময় পথে পুলিশ তাঁকে আটকায় এবং সন্দেহজনক বস্তাটিতে কী আছে জানতে চায়। রাম আশিস তখন অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে পুলিশকে জানান, বস্তার ভেতরে ‘গম‘ আছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে তিনি পুনরায় তাঁর যাত্রা শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত কুশীনগরের আখখেতে নীলমের নিথর দেহটি ফেলে দিয়ে আসেন। এই মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি সাময়িকভাবে পুলিশের চোখকে ধুলো দিতে সক্ষম হলেও, শেষ পর্যন্ত সত্য চাপা থাকেনি।

    তদন্ত ও অপরাধ উন্মোচন

    নীলম নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা প্রথমে অনুমান করেছিলেন যে, সে হয়তো ছটপূজা উপলক্ষে কোথাও গেছে। তবে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে যখন এই মর্মান্তিক তথ্যটি আসে যে, সোমবার রাম আশিস একটি বস্তা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, তখন পরিবারের সদস্যদের মনে গভীর সন্দেহের সৃষ্টি হয়। আর দেরি না করে তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করেন।

    পুলিশ প্রথমে নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নথিভুক্ত করে এবং নিবিড় তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাম আশিস সত্যিই একটি বস্তা নিয়ে যাচ্ছেন। এই ফুটেজ রাম আশিসের বিরুদ্ধে একটি জোরালো প্রমাণ হিসেবে আবির্ভূত হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে কুশীনগরের সেই আখখেত থেকে নীলমের বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, যা রাম আশিসের জঘন্য অপরাধের সত্যতা নিশ্চিত করে। পুলিশ বর্তমানে রাম আশিসকে হেফাজতে নিয়েছে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ড উত্তর প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর আবারও প্রশ্ন তুলেছে এবং পারিবারিক বিবাদের ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরেছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here