দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং শান্তি আলোচনার মধ্যেই পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। সাম্প্রতিক এই সংঘাত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
সীমান্তে নতুন সংঘর্ষ ও হতাহতের খবর
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে খবর, গত শুক্র ও শনিবার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া সহিংস সংঘর্ষে কমপক্ষে পাঁচজন পাকিস্তানি সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। একইসাথে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, আফগানিস্তানের দিক থেকে আসা প্রায় পঁচিশজন সশস্ত্র যোদ্ধাকে সফলভাবে নির্মূল করা হয়েছে। রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের সেনারা কুরাম এবং উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর জঙ্গিদের অন্তত দুটি অনুপ্রবেশের চেষ্টা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ব্যর্থ করে দিয়েছে, যেখানে এই বিপুল সংখ্যক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ ও কাবুলের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্ন
ইসলামাবাদ বরাবরই অভিযোগ করে আসছে যে, আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসন তাদের ভূখণ্ডে সক্রিয় সশস্ত্র দলগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে, সীমান্তের এই নতুন অনুপ্রবেশের চেষ্টা আফগান ভূমি থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাস দমনে কাবুল যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটিকে গুরুতর প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে জঙ্গিদের মুক্ত বিচরণ এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে গভীর সন্দেহ তৈরি করেছে, যা পাকিস্তানের নিরাপত্তা উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
আফগান তালেবানের অবস্থান ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
এই নতুন সীমান্ত সংঘর্ষের বিষয়ে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে তারা অতীতে বারবার সশস্ত্র যোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে এসেছে। এর পরিবর্তে, তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের পাল্টা অভিযোগ তুলেছে, বিশেষ করে যখন পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন আফগান অঞ্চলে বিমান হামলা পরিচালনা করেছে বলে দাবি করা হয়। এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং সমাধান প্রক্রিয়াকে জটিলতর করছে।
চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও শান্তি প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতেও এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল, যা একটি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে রূপ নেওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি এড়াতে এবং উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি দোহায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং ভবিষ্যতের সহিংসতা রোধ করা। যদিও এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাত্র কয়েকমাস পরই এই নতুন সংঘর্ষ শান্তি প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই চলমান অস্থিরতা নিরসনে এবং সংকট সমাধানের উদ্দেশ্যে শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আবারও আলোচনায় বসেছেন, যেখানে কাবুলের প্রতিনিধিদল একটি নতুন প্রস্তাবও জমা দিয়েছে। এই আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
